পুরাণ ঢাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড: প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে ভয় ও নীরবতার Brutal murder in ancient Dhaka: Fear and silence in the eyes of eyewitnesses
পুরাণ ঢাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড: প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে ভয় ও নীরবতার
গত বুধবার, মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের কাছে শত শত মানুষের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং ইট-পাথর দিয়ে থেঁতলে হত্যা করে। এই ঘটনার একজন সাক্ষী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাসায়নিক ব্যবসায়ী বলেন, "সবাই তাঁর আর্তনাদ শুনেছে, কিন্তু আমরা সবাই নীরব ছিলাম। কেউ ভিডিও করছিল, কেউ দূর থেকে দেখছিল, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেনি। সন্ত্রাসী আর চাঁদাবাজদের ভয় আমাদের সবাইকে পঙ্গু করে দিয়েছিল।"
ঘটনার প্রেক্ষাপট ও কারণ
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল কারণ হলো চাঁদাবাজি।কয়েক মাস ধরে মাহমুদুল হাসান (মহিন), ছোট মনির, আলমগীরসহ কয়েকজন সোহাগের কাছে প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। পরে, বিএনপির এক নেতার মধ্যস্থতায় মাসে দুই লাখ টাকায় রফা হয়। ঘটনার দিন বিকেলে চাঁদা নিতে এলে সোহাগ তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে, পুলিশের একটি সূত্র ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কথাও উল্লেখ করেছে।
নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।এই হত্যাকাণ্ডে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং সোহাগের দোকানের পাশের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী জানান, ২০ থেকে ২২ জন যুবক ও তরুণ সোহাগকে তার দোকান থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আশেপাশে থাকা দোকানদারদের চুপ থাকার জন্য হুমকি দেয়। ঘণ্টাখানেক পর তিনি জানতে পারেন সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে।
আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পরিবার ও পারিপার্শ্বিক প্রতিক্রিয়া
কেরানীগঞ্জের মডেল টাউন আবাসিক এলাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন সোহাগ। তার ফ্ল্যাটে এখন তালা ঝুলছে। প্রতিবেশীরা তাকে শান্ত স্বভাবের এবং পরোপকারী হিসেবে স্মরণ করেছেন।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির পুরান ঢাকায় প্রতিবাদ সভা করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে। নিহতের পরিবারও দোষীদের দ্রুত বিচার চেয়েছে।
তদন্ত ও গ্রেপ্তার
সোহাগের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১৯ জনের নাম
স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, পাশাপাশি অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ থেকে ২০
জনকে আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ ও র্যাব
যৌথভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং কয়েকজনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারও করেছে। বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে, যার মধ্যে যুবদল নেতা মাহমুদুল হাসান ওরফে মহিন এবংতারেকেরতারেক রহমান রবিন আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন। কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। ছাত্রদল নেতা তারেক
রহমান রবিন আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এই ঘটনাটি পুরান ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।