ইরানের আকাশসীমার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকতে পারবে না ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান! Israeli warplanes will not be able to enter within 300 kilometers of Iranian airspace!
ইরানের আকাশসীমার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকতে পারবে না ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান!
মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরবৈরী রাষ্ট্র ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বিশ্ববাসীকে নতুন করে হতবাক করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষ সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও, তেহরান এর ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারছে না। বরং ইসরায়েলের সম্ভাব্য পুনরায় আগ্রাসনের আশঙ্কায় ইরান দ্রুততার সঙ্গে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
বিশেষ করে ইসরায়েলের স্টেলথ প্রযুক্তির যুদ্ধবিমানের বিপরীতে নিজের অসহায়ত্ব স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করেছে ইরান। তাই এবার আকাশ প্রতিরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাজাচ্ছে খামেনি প্রশাসন।
চীনা ক্ষেপণাস্ত্রের নতুন চালান হাতে পেল ইরান
বিশ্বস্ত একাধিক আরব গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ২৪ জুনের মধ্যে চীন থেকে অত্যাধুনিক সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম HQ-9 ও HQ-16-এর বিশাল একটি চালান ইরানে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব চীনা এসএএম সিস্টেম এতটাই শক্তিশালী যে, ইরানের আকাশসীমার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান প্রবেশ করতে পারবে না।
এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা অনেকগুণ শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা কাঠামোর পুনর্গঠন
যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছিল। সেগুলোর পুনর্গঠনের অংশ হিসেবেই এই চীনা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ইরান অত্যন্ত দ্রুতগতিতে তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠনে কাজ করে চলেছে এবং এই অগ্রগতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকেও অবহিত রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, এই প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বিনিময়ে ইরান বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল চীনকে সরবরাহ করছে। উল্লেখ্য, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও চীন তৃতীয় দেশের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে ইরানি তেল আমদানি করে থাকে এবং বর্তমানে দেশটি ইরানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।
ইসরায়েলি আধিপত্যের অবসান ঘটাতে চায় ইরান
বিশ্লেষকদের মতে, চীনা HQ-9 ও HQ-16 মিসাইল সিস্টেম যুক্ত হওয়ার ফলে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে যা ইসরায়েলের আকাশপথে অভিযানকে অনেক কঠিন করে তুলবে।
সম্প্রতি ইসরায়েল যে ধরণের স্ট্রাইক পরিচালনা করেছিল – যেখানে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ও ইরানের সামরিক গবেষকদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয় – ভবিষ্যতে তেমন হামলা প্রতিহত করাই এখন ইরানের মূল লক্ষ্য।
ইরানের পাল্টা প্রতিশোধ এবং সামরিক সক্ষমতা
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ইরানও পাল্টা প্রতিশোধ নিয়েছে। তেলআবিব ও হাইফার মতো ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালিয়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করেছে তেহরান।
বর্তমানে ইরান রাশিয়ার S-300 এবং নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি খোরদাদ ও বাভার-৩৭৩ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে আকাশ প্রতিরক্ষা পরিচালনা করছে। তবে এসব সিস্টেম মার্কিন স্টেলথ ফাইটার এফ-৩৫ প্রতিহত করতে পুরোপুরি কার্যকর নয় বলে অনেকের বিশ্বাস।
এই অবস্থায় HQ-9 ও HQ-16 সিস্টেম ইরানকে এমন প্রতিরক্ষাগত সক্ষমতা প্রদান করতে পারে, যা বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগতভাবে অপরিহার্য।মধ্যপ্রাচ্যে কৌশলগত ভারসাম্যে পরিবর্তন
চীন ইতোমধ্যেই পাকিস্তান, মিসরসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশের কাছে HQ-9 বিক্রি করেছে। এখন ইরানকে এই প্রযুক্তি সরবরাহ করার ফলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ভারসাম্যে এক বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা ঘটছে।
চীনের এই পদক্ষেপ শুধু ইরানের সামরিক সক্ষমতাই নয়, বরং তেহরান-বেইজিং সম্পর্ককেও নতুন মাত্রা দিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য কৌশলগতভাবে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
"চীনের কাছ থেকে HQ-9 ও HQ-16 ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহের পর ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, এখন থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূর থেকেও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে পারবে না। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তির ভারসাম্যে এক বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে।"