নতুনবাজারে থামেনি বিক্ষোভ, পুলিশের লাঠিচার্জেও অনড় ইউআইইউ ছাত্ররা
নতুনবাজারে থামেনি বিক্ষোভ, পুলিশের লাঠিচার্জেও অনড় ইউআইইউ ছাত্ররা
স্টাফ রিপোর্টার | ঢাকা | জুন ২১, ২০২৫
ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা নতুনবাজারে শুক্রবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (UIU) শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শনিবার সকালেও থামেনি। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও ধাওয়ার মধ্যেও অনড় থেকেছে শিক্ষার্থীরা। তারা বারবার বলছে, “আমরা ন্যায়বিচার চাই, পথ ছাড়ব না!”
কেন এই আন্দোলন?
ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টির টিউশন ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো সমাধান না দিয়ে উল্টো বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে, যা আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রসমাজ।
বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করেই ‘বহিষ্কৃতদের প্রত্যাহার ও ফি কমানোর’ দাবিতে শিক্ষার্থীরা নতুনবাজার মোড়ে অবস্থান নেয়। তারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
উত্তপ্ত নতুনবাজার: পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
শুক্রবার বিকেলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে একাধিকবার অনুরোধ করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বে না জানিয়ে বসে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
বিক্ষোভকারী একজন শিক্ষার্থী বলেন,
“আমরা বসেছিলাম নিরীহভাবে। হঠাৎ পুলিশ এসে হামলা করল। অনেকেই আহত হয়েছে। কিন্তু আমরা থামছি না। এটা আমাদের অধিকার।”
নতুনবাজার মোড়ে দেখা যায় শতাধিক শিক্ষার্থী প্ল্যাকার্ড হাতে বসে আছেন। ‘Students not Criminals’, ‘Stop Fee Hike’, ‘We Want Justice’—এমন নানা স্লোগান লেখা ব্যানার ছিল তাঁদের হাতে।
পাশাপাশি, ট্রাফিক পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। রামপুরা, বসুন্ধরা, নিকেতনের দিক থেকে আসা যানবাহন আটকে যায় দীর্ঘক্ষণ।
আহত ও আটক
সূত্র জানায়, পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ৫ জনকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ, তবে পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীদের হস্তক্ষেপে ৪ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি:
১. বহিষ্কৃত সকল শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে ফিরিয়ে নেওয়া
২. বর্ধিত টিউশন ফি বাতিল
৩. শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে নীতিনির্ধারণ
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ গঠন
৫. পুলিশের হামলার তদন্ত ও দোষীদের বিচার
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
UIU কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,
“আমরা পরিস্থিতি শান্তভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপের জন্য প্রস্তুত। তবে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না।”
পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন,
“জনদুর্ভোগ কমাতেই আমরা বাধ্য হয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। এখনো শিক্ষার্থীদের সংযত আচরণের আহ্বান জানাই।”
বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ:
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এমন আন্দোলন নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে টিউশন ফি বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক কঠোরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “বিনা আলোচনায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার একটি ভুল পদক্ষেপ। প্রশাসনকে চাইলে আগে থেকেই সমঝোতা করা যেত।”
সর্বশেষ আপডেট (সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত):
-
শিক্ষার্থীরা নতুন করে রাত ১০টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।
-
পুলিশের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আগামীকাল ভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
-
বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে র্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উপসংহার:
নতুনবাজারে UIU শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, এটি দেশের উচ্চশিক্ষা খাতের দীর্ঘদিনের অসন্তোষ ও বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি। এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ আকার ধারণ করতে পারে