এসএসসির ফলাফল খারাপ হওয়ার তিনটি বড় কারণ Three major reasons for poor SSC results
এসএসসির ফলাফল খারাপ হওয়ার তিনটি বড় কারণ
এসএসসির ফলাফল ২০২৫: কেন ফল খারাপ হলো?
এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সারাদেশে আলোচনার ঝড় উঠেছে—কেন এমন খারাপ ফল? এত কম পাসের হার, এত কম জিপিএ-৫—এসব প্রশ্ন এখন অভিভাবক থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সামগ্রিক ফলাফলের চিত্র
জিপিএ-৫ এবং পাসের হারের পরিবর্তন
২০২৫ সালে দেশের নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় প্রায় ১৪ লাখ ৭৯ হাজার পরীক্ষার্থী। কিন্তু পাস করেছে মাত্র ১০ লাখ ৬ হাজারের কিছু বেশি, অর্থাৎ পাসের হার মাত্র ৬৮.০৪ শতাংশ। গত বছর এই হার ছিল ৮৩.৭৭ শতাংশ। একইভাবে, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে প্রায় ৩৯ হাজার।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ
এবারের ফলাফলে ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থী ফেল করেছে। গত বছর এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫১টি। একই সঙ্গে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও তিনগুণ কমে গেছে।
ফল খারাপ হওয়ার তিনটি মূল কারণ
করোনা-পরবর্তী শিক্ষাজীবনের ক্ষতি
দীর্ঘমেয়াদি ক্লাস বন্ধ থাকা
২০২০ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া এই ব্যাচটি শুরু থেকেই সমস্যার মধ্যে পড়ে। সেই বছরের মার্চে শুরু হয় করোনা–পরবর্তী ছুটির ধাক্কা। টানা দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে নিয়মিত অংশ নিতে পারেনি।
অনলাইনে শিক্ষার সীমাবদ্ধতা
অনলাইন শিক্ষায় অংশগ্রহণ ছিল সীমিত। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য তো প্রযুক্তির জোগানই ছিল না। ফলে ভিত্তি দুর্বল হওয়ায় ফলাফলে এর প্রভাব স্পষ্ট।
গণিত পরীক্ষায় পাসের হার কমে যাওয়া
কঠিন প্রশ্নপত্রের প্রভাব
গণিতে পাসের হার সবচেয়ে কম, যা পুরো ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা বোর্ডে গণিতে পাসের হার ছিল মাত্র ৭৫.১৪%—যেখানে বাংলায় ৯৭%, ইংরেজিতে ৮৮%, রসায়নে ৯৫%।
অন্যান্য বিষয়ের তুলনামূলক পাস হার
প্রযুক্তি, পৌরনীতি, পদার্থ, রসায়ন, হিসাববিজ্ঞান—সবকটিতেই ৯০% এর ওপরে পাসের হার থাকলেও গণিতে দুর্বলতা স্পষ্ট।
উত্তরপত্র মূল্যায়নের কড়াকড়ি
পূর্ববর্তী নমনীয়তার তুলনা
পূর্বে নমনীয়ভাবে খাতা দেখা হলেও এবার উত্তরপত্র মূল্যায়নে কঠোরতা ছিল বেশি। অনেকেই মনে করছেন, এটি শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছে।
বোর্ড কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, “আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না পাসের হার কমানো বা বাড়ানো। আমরা চেয়েছি মূল্যায়ন যেন যথাযথ হয়।”
বোর্ডভিত্তিক পাসের হার
রাজশাহীর সফলতা ও বরিশালের পিছিয়ে পড়া
সবচেয়ে বেশি পাসের হার রাজশাহী বোর্ডে—৭৭.৬৩%, আর সবচেয়ে কম বরিশালে—৫৬.৩৮%।
ঢাকা, যশোর, দিনাজপুরসহ অন্যান্য বোর্ডের ফল
· ঢাকা: ৬৭.৫১%
· কুমিল্লা: ৬৩.৬০%
· যশোর: ৭৩.৬৯%
· চট্টগ্রাম: ৭২.০৭%
· দিনাজপুর: ৬৭.০৩%
· ময়মনসিংহ: ৫৮.২২%
ছাত্র-ছাত্রীর পাসের হার ও জিপিএ-৫ তুলনা
এবার মেয়েরা সবদিক থেকে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। পাসের হার:
· মেয়েরা: ৭১%
· ছেলেরা: ৬৫%+
জিপিএ-৫ পেয়েছে:
· মেয়েরা: ৬৬,৭৮০ জন
· ছেলেরা: ৫৮,২৩৮ জন
শতভাগ পাস ও শূন্য পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্লেষণ
এই বছর ৯৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শতভাগ পাস করেছে, যেখানে গতবার ছিল ২৯৬৮টি। এটি চিন্তার কারণ।
১৩৪টি প্রতিষ্ঠানে একজনও পাস করতে পারেনি—যা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি।
বিশ্লেষকদের মতামত: কী হওয়া উচিত ভবিষ্যতে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, “শুধু পাসের হার নয়, দক্ষতা অর্জনই এখন বড় বিষয়। শিক্ষার্থীরা কতটা শিখেছে, সেটাই মূল্যায়নের মাপকাঠি হওয়া উচিত।”
শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন
বর্তমানে শিক্ষা শুধু পাস-ফেল নির্ভর না হয়ে দক্ষতা, চিন্তাশক্তি ও সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা অর্জনের দিকেই মনোযোগী হওয়া জরুরি। শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত মান বাড়াতে শিক্ষকের প্রশিক্ষণ, সিলেবাসের বাস্তবায়ন ও মানসম্পন্ন মূল্যায়ন প্রক্রিয়া দরকার।
২০২৫ সালের এসএসসি ফলাফলে যে ধাক্কা লেগেছে, তা শুধু এক বছরের ফল নয়, বরং অতীত পাঁচ বছরের শিক্ষাজীবনের প্রতিফলন। কোভিড, অনুপস্থিতি, অনিয়মিত ক্লাস এবং কঠোর মূল্যায়ন—সব মিলিয়েই শিক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ হয়েছে। এখন সময় নতুন করে ভাবার—শিক্ষার্থীরা যেন শুধু পাস না করে, প্রকৃত শিক্ষা লাভ করে।
১.
২০২৫
সালে
এসএসসি
পরীক্ষায়
পাসের
হার
কত
ছিল?
৬৮.০৪ শতাংশ।
২.
কোন
বোর্ডে
সবচেয়ে
বেশি
ও
সবচেয়ে
কম
পাসের
হার
দেখা
গেছে?
রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি (৭৭.৬৩%) এবং
বরিশালে সবচেয়ে কম (৫৬.৩৮%)।
৩.
সবচেয়ে
কম
পাস
হয়েছে
কোন
বিষয়ে?
গণিত বিষয়ে পাসের হার সবচেয়ে কম।
৪.
এবার
কতজন
শিক্ষার্থী
জিপিএ-৫
পেয়েছে?
মোট ১ লাখ ২৫
হাজার ১৮ জন শিক্ষার্থী।
৫.
ফল
খারাপ
হওয়ার
মূল
কারণ
কী
ছিল?
করোনাজনিত ক্লাস ঘাটতি, গণিতে দুর্বল পারফরম্যান্স ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের
কঠোরতা।