Banner 728x90


আদালত অবমাননার দায়ে শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের জেল

 আদালত অবমাননার দায়ে শেখ হাসিনাকে  মাসের জেল

ঢাকা, মঙ্গলবার (তারিখ):

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে একটি বহুল আলোচিত মামলার রায়। আদালত অবমাননার অভিযোগে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মো. জাহিদুল ইসলাম ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ের ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে, যা দেশীয় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মনোযোগ কেড়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত 

ঘটনার সূত্রপাত হয় শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। এক জনসভায় উচ্চারিত ওই বক্তব্যে তিনি দেশের বিচার বিভাগকে 'রাজনীতির হাতিয়ার' বলে মন্তব্য করেন। এই মন্তব্যের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এরপরই সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী আদালতের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার অভিযোগ এনে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন।

মামলার আবেদনকারীর দাবি, একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির এমন বক্তব্য শুধুমাত্র বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং বিচারিক প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা নষ্ট করে। আদালত তার অভিযোগ আমলে নেন এবং শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন।

শেখ হাসিনার জবাব:

শেখ হাসিনা আদালতে লিখিতভাবে বলেন, তার বক্তব্যকে 'ভুল ব্যাখ্যা' করা হয়েছে এবং তিনি বিচার বিভাগের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়ে থাকেন। তিনি আরও জানান, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটিই তিনি প্রয়োগ করেছেন।

তবে আদালত শেখ হাসিনার বক্তব্যকে অপর্যাপ্ত বলে গণ্য করেন এবং বলেন, “বক্তব্যটি সরাসরি বিচার বিভাগের মর্যাদায় আঘাত করেছে, যা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আদালতের রায়:

মঙ্গলবার (তারিখ) আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, “শেখ হাসিনা একজন প্রভাবশালী নেতা এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন। তার প্রতিটি কথার প্রভাব জনগণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উপর পড়ে। তাই তার বক্তব্যের দায়ও বিশাল। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় এই রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিচারক তার রায়ে বলেন, “আদালতের মর্যাদা রক্ষা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়এই বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

আদালত শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ছয় () মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন এবং তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করেন। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।


রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:

রায়ের পরপরই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করা হয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমাদের নেত্রী কখনো আদালত অবমাননা করেননি। জনগণের আদালতে এই রায়ের জবাব দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, “আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি, উচ্চ আদালতে সত্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

অন্যদিকে, বিএনপি অন্যান্য বিরোধীদল এই রায়কে 'দীর্ঘদিনের প্রতিশোধের জবাব' হিসেবে দেখছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আদালত আজ প্রমাণ করলআইনের চোখে সবাই সমান। যারা বিচার ব্যবস্থাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে, তাদের রক্ষা নেই।


আইনজীবী মহলের প্রতিক্রিয়া:

আইনজীবী মহলে রায়টি মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার কামরুল ইসলাম বলেন, “রায়টি আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে যথার্থ এবং সাহসিকতাপূর্ণ। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করতে এমন দৃষ্টান্তমূলক রায় সময়োপযোগী।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা বলছেন, “শেখ হাসিনার বক্তব্য কনটেক্সট থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা হয়েছে। এই রায়ে রাজনৈতিক বিদ্বেষের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন

রায়ের পরপরই সামাজিক:

রায়ের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণের প্রতিক্রিয়া প্রবলভাবে দেখা যায়। অনেকে আদালতের সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেন, আবার অনেকেই একেরাজনৈতিক প্রতিহিংসা উদাহরণ হিসেবে দেখান। এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এমন রায় দরকার ছিল। কারো নাম শেখ হাসিনা বা অন্য কিছু হলেও আইনের আওতায় আনা জরুরি।

অন্যদিকে, একজন মুক্তিযোদ্ধা লিখেছেন, “যিনি গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন, যিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, তাকে কি করে আদালত অবমাননার দায়ে সাজা দেওয়া যায়?”


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

রায়ের পরপরই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে প্রচার করে। বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স এই রায়কে বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরীক্ষার ফলাফল হিসেবে দেখেছে।

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলে, “কোনো রাজনৈতিক নেতার ওপর আইন প্রয়োগে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা থাকা আবশ্যক। তবে এই রায়ের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকলে সেটা বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার হবে।


ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি:

এই রায়ের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনার জন্ম হয়েছে। শেখ হাসিনার দল আপিল করার কথা জানিয়েছে এবং আপিলের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হবে শিগগিরই। এদিকে, বিএনপি নেতারা এই রায়কে সরকারের পতনের সূচনা হিসেবে দেখছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই রায়ের প্রভাব শুধু আইনগত নয়, বরং রাজনৈতিক সামাজিক প্রতিক্রিয়ার দিক থেকেও দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।


উপসংহার:

বাংলাদেশের ইতিহাসে ধরনের রায় বিরল। একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে আদালত অবমাননার দায়ে সাজা প্রদান দেশের আইনপ্রণয়ন বিচার বিভাগের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। আদালতের এই রায় রাষ্ট্রক্ষমতার ভারসাম্য এবং আইনের শাসনের গুরুত্বকে নতুন করে সামনে আনল। তবে এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে কী ধরণের পরিবর্তন ডেকে আনে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url