Banner 728x90


শক্তির নতুন দিগন্তে ইরান, পরমাণু বিজ্ঞানীদের বিস্ময়কর সাফল্য

শক্তির নতুন দিগন্তে ইরান, পরমাণু বিজ্ঞানীদের বিস্ময়কর সাফল্য

শক্তির নতুন দিগন্তে ইরান, পরমাণু বিজ্ঞানীদের বিস্ময়কর সাফল্য

ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী আবিষ্কার

বিশ্ব যখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আনছে, তখন এক বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক সাফল্যের সাক্ষী হলো মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। দেশটির পরমাণু বিজ্ঞানীরা সফলভাবে এমন এক প্রযুক্তির সন্ধান পেয়েছেন, যা ভবিষ্যতে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধরনই পাল্টে দেবে না, বরং বিশ্বের শক্তি রাজনীতিতেও এক নতুন যুগের সূচনা করবে।

ইরানের জাতীয় পরমাণু শক্তি সংস্থা (AEOI) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তারা প্রথমবারের মতো সফলভাবে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এতে মাত্র ৫০ সেকেন্ডের মধ্যেই তারা বিপুল পরিমাণ তাপ শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। এই অর্জনকে 'ইতিহাসের মোড় ঘোরানো বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন' বলে অভিহিত করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা।


সম্প্রতি এই প্রযুক্তিটি উদ্ভাবনে কাজ করে ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট। তবে, এই গবেষণার প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা পরমাণু বিজ্ঞানী গেল ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে দখলদারদের হামলায় নিহত হন


এই
যুগান্তকারী আবিষ্কারের পেছনে যাঁরা আছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন . মোহসেন রেজাভি, যিনি ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি প্রায় এক দশক ধরে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রকল্পে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।

তবে দুঃখজনকভাবে, কয়েক মাস আগেই এক সন্ত্রাসী হামলায় তিনি প্রাণ হারান। ইরান সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ওই হামলার জন্য দায়ী।

এই ঘটনা নতুন করে আন্তর্জাতিক মহলে ইরান-ইসরায়েল বৈরিতাকে আরও তীব্র করে তুলেছে। পরমাণু গবেষণার অগ্রগতি রোধে ইসরায়েলের আগ্রাসী কৌশল দীর্ঘদিন ধরেই ইরানকে চাপে রাখছিল। কিন্তু এই সাফল্য যেন ইরানকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।


ইরান-যুক্তরাষ্ট্র, পরমাণু প্রযুক্তি থেকে পরমাণু যুদ্ধের পথে

পরমাণু শক্তি মূলত শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কথা বলা হলেও, ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটি হয়ে উঠেছে শক্তির প্রতীক। ২০১৫ সালের Joint Comprehensive Plan of Action (JCPOA) চুক্তির পর কিছুটা উত্তাপ প্রশমিত হলেও, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাকর হয়ে ওঠে।

আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগোচ্ছে, যদিও ইরান সবসময়ই দাবি করে এসেছেতাদের প্রকল্প সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার অংশ।
এই আবিষ্কারটি প্রকাশ্যে আসার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়

"ইরানের পরমাণু সক্ষমতা শুধু বিজ্ঞান নয়, এটি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।"

অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন

আমাদের আবিষ্কার যুদ্ধের জন্য নয়, শান্তির জন্য। কিন্তু কেউ যদি আমাদের বিজ্ঞানীদের রক্ত ঝরায়, তার জবাবও আমরা দেব।


ইসরায়েল নেতানিয়াহুর পতন সন্নিকটে: ইরানি জেনারেল

ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর (IRGC) শীর্ষস্থানীয় জেনারেল মোহাম্মদ রেজা নাসিরি এক সামরিক সম্মেলনে বলেন:

ইসরায়েল আমাদের বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে, কিন্তু তারা ভুলে গেছে শহীদদের রক্তেই সাফল্যের বীজ জন্মায়। নেতানিয়াহু সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

তিনি আরও বলেনএই আবিষ্কার শুধু বিজ্ঞান নয়, এটি ইরানের সার্বভৌমত্বের বিজয়, যা পশ্চিমাদের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে।


ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী আবিষ্কার


বিশ্বের প্রতিক্রিয়া প্রতিধ্বনি

রাশিয়ার সমর্থন:

রাশিয়া এই আবিষ্কারকেমধ্যপ্রাচ্যে এক বৈজ্ঞানিক বিপ্লববলে অভিহিত করেছে এবং ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক গবেষণায় আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

চীনের বার্তা:

চীনের বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ইরানের এই উন্নয়নকে স্বাগত জানায় এবং এশিয়ার শক্তি-নির্ভরতা কমাতে ইরানের পাশে থাকবে।

ইউরোপের দ্বৈত নীতি:

ইউরোপীয় ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও, ফ্রান্স জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।


এই আবিষ্কারের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ

ইরানের বিজ্ঞানীরা নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ায় ডিউটেরিয়াম ট্রাইটিয়াম ব্যবহার করে এমন একটি রিঅ্যাকশন সম্পন্ন করেন, যেখানে ১২০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তারা স্থায়ী ফিউশন জ্বালনির সম্ভাবনা দেখাতে সক্ষম হন।

এতে যে পরিমাণ শক্তি উৎপাদন হয়েছে, তা দিয়ে একটি ছোট শহরের ২৪ ঘণ্টার বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,

এটি বিশ্বে একমাত্র উন্নয়নশীল দেশ যারা স্বাধীনভাবে ফিউশন সফল করতে পেরেছে। এটি ইরানের জন্য এক বৈপ্লবিক ধাপ।


শক্তি রাজনীতিতে নতুন চিত্র: ইরান জ্বালানি রপ্তানিকারক হিসেবে

এই আবিষ্কারের মাধ্যমে ইরান তেল প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশাপাশি ফিউশন শক্তি রপ্তানির কথাও ভাবছে।
ইরানের জ্বালানি মন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন

আগামী বছরের মধ্যে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে ফিউশন-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করব। এশিয়া আফ্রিকার অনেক দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে করে সৌদি আরব, কাতার সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রভাব হ্রাস পাবে। ইরান হবে নতুন শক্তির উৎস।


রাজনৈতিক পরিণতি: ইরানকে আটকানো যাবে তো?

এই আবিষ্কার শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক নয়, এটি একটি কূটনৈতিক অস্ত্রও। বহু বছর ধরে পশ্চিমারা ইরানকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছিল পরমাণু কর্মসূচির ভয় দেখিয়ে। কিন্তু এখন ইরান নিজেই প্রমাণ করেছেতারা নির্বাসন আর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও নিজেদের প্রযুক্তি উন্নয়নে সক্ষম।

এই বাস্তবতায় এখন প্রশ্ন উঠছে:
ইরানকে কি আর আটকে রাখা যাবে?
 নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কি এই বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি থামানো যাবে?
না কি, পশ্চিমাদের এখন ইরানের সঙ্গে সম্মানজনক আলোচনায় বসা উচিত?


ইরানের অবস্থান: শান্তি, কিন্তু আত্মরক্ষা অবিচল

ইরান সরকারের এক মুখপাত্র বলেন

আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যদি আমাদের বিজ্ঞান, আমাদের মানুষ, আমাদের সার্বভৌমত্বকে কেউ আঘাত করে, আমরা চুপ থাকব না।


উপসংহার

ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের এই সাফল্য শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য এক নতুন বার্তা। শক্তির ভবিষ্যৎ যেখানে নবায়নযোগ্যতার দিকে এগোচ্ছে, সেখানে ইরানের নিউক্লিয়ার ফিউশন সাফল্য হতে পারে মানবজাতির টিকে থাকার নতুন উপায়।

তবে প্রশ্ন রয়ে যায়এই আবিষ্কার কি শুধুই বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, না কি এটি হয়ে উঠবে রাজনীতির হাতিয়ার?


 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url