Banner 728x90


ইরানকে থামাতে গিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনল ইসরায়েল!

 

ইরানকে থামাতে গিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনল ইসরায়েল!

২০২৫ সালের মধ্যপ্রাচ্য যেন আগুনে ঝাঁপ দেওয়া এক চোরাবালির মতো। ইরানকে থামাতে ইসরায়েলের বহু বছরের প্রচেষ্টা আজ এক ভয়ংকর চক্রে আটকে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গুপ্তহত্যাসাইবার যুদ্ধএবং ছায়াযুদ্ধে অভ্যস্ত ইসরায়েল এবার মুখোমুখি হয়েছে ইরানের সরাসরি প্রতিশোধেরএকটি এমন আঘাতযা দেশটির ইতিহাসে নজিরবিহীন।

এই প্রতিবেদনে আমরা খতিয়ে দেখবকেন ইসরায়েল এত আগ্রাসী হয়ে উঠেছে, কেন ইরান প্রতিশোধ নিচ্ছে, এবং কীভাবে একে অপরকে ঘায়েল করতে গিয়ে তারা দুজনেই নিজেদের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।


ইতিহাসের শুরু: ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক একদা বন্ধুত্বপূর্ণ!

বিশ্বাস করা কঠিন হলেও সত্য১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর ইরানই প্রথম মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় তৎকালীন পারস্যের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ছিলেন পশ্চিমাপন্থী ধর্মনিরপেক্ষ। সেই সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক সামরিক সম্পর্কও ছিল ঘনিষ্ঠ।

কিন্তু ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব এই সম্পর্ককে সম্পূর্ণ উল্টে দেয়।

আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন


 ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব: শত্রুতার জন্ম

আয়াতুল্লাহ খোমেইনির নেতৃত্বে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইরান ঘোষণা করেইসরায়েল একটি অবৈধ রাষ্ট্র, এবং এটি মুসলিম উম্মাহর শত্রু। একইসঙ্গে, তারা ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামে নিজেদের অগ্রণী ভূমিকায় স্থাপন করে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতারা বারবার বলেন:

ইসরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা হবে।

এই ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় এক দীর্ঘ, ঠান্ডা কিন্তু ভয়ানক ছায়াযুদ্ধ


ফিলিস্তিন ইস্যু: আগুনে ঘি

ইরানের শত্রুতা কেবল ধর্মীয় নয়, কূটনৈতিক মানবিকও। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দমননীতি ইরানকে রীতিমতো ক্ষুব্ধ করে।

ইরানের সহযোগিতা পায়:

·       হামাস (গাজাভিত্তিক সশস্ত্র দল)

·       ইসলামিক জিহাদ মুভমেন্ট

·       হিজবুল্লাহ (লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র শিয়া গোষ্ঠী)

ইসরায়েল মনে করে, ইরান এই গোষ্ঠীগুলোকে রকেট, ড্রোন, অর্থ প্রশিক্ষণ দিয়ে সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে। অন্যদিকে, ইরান দাবি করে তারা "মুক্তিযোদ্ধাদের" সহায়তা করছে।


পরমাণু ইস্যু: অস্তিত্বের প্রশ্ন

২০০০-এর দশকের শুরু থেকেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ঘিরে পশ্চিমা দুনিয়ায় উদ্বেগ বাড়তে থাকে। ইসরায়েল বারবার বলে এসেছে,

ইরান যদি পরমাণু বোমা বানায়, সেটা আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি।

এই আশঙ্কা থেকেই ইসরায়েল বহুবার গুপ্তচরবৃত্তি, সাইবার হামলা এবং বিজ্ঞানী হত্যায় অংশ নেয়। উল্লেখযোগ্য:

·       ২০১০: Stuxnet সাইবার ভাইরাসে নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনার সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস হয়।

·       ২০২০: ইরানের শীর্ষ বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ গুপ্তহত্যা।

·       ২০২2–2024: ইরানভিত্তিক প্রকল্পে বিস্ফোরণ, রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড, বিজ্ঞানী নিখোঁজ।


 গুপ্তহত্যা সাইবার যুদ্ধ: ছায়াযুদ্ধের নাটক

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মসাদ গোপনে বহু ইরানি প্রকল্পে হামলা চালায়।

বিশ্বের অন্যতম সফল গোপন অভিযানে পরিণত হয়:

·       শেডো ওয়ার নামে পরিচিত ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের সেই অধ্যায়।

·       ইরানের অভ্যন্তরে শতাধিক গুপ্তঘাতক দল সক্রিয় ছিল বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা দাবি করে।


বিপ্লব-পরবর্তী ইহুদি অভিবাসন

ইরানে একসময় প্রায়  লক্ষের বেশি ইহুদি বাস করত কিন্তু ইসলামী বিপ্লবের পর:

·       তাদের ওপর নজরদারি শুরু হয়।

·       অনেকেই ব্যবসা হারায়।

·       ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ভয় পেতে থাকে।

এর ফল:

·       ১০,০০০১৫,০০০ ইরানি ইহুদি সরাসরি ইসরায়েলে চলে যায়।

·       বাকিরা প্রথমে ইউরোপ/আমেরিকা হয়ে ইসরায়েলে পাড়ি জমায়।

·       অনেকের ইসরায়েলের বাস্তবতা সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না, কিন্তু তারা আয়াতুল্লাহ শাসনের ভয়েই দেশ ছাড়ে।


 ২০২৫ সালের সংঘর্ষ: এক নতুন যুদ্ধের সূচনা!

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়, যখন:

·       ইসরায়েল সিরিয়ায় এক ইরানি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়, যেখানে কয়েকজন ইরানি জেনারেল নিহত হন।

·       ইরান পাল্টা জবাবে তেলআবিব, হাইফা দক্ষিণ ইসরায়েলে একযোগে ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

ক্ষয়ক্ষতি:

·       শতাধিক বেসামরিক মানুষ হতাহত

·       গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটি আংশিক ধ্বংস

·       সাইবার হামলায় জাতীয় বিদ্যুৎব্যবস্থা বিপর্যস্ত


 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

·       যুক্তরাষ্ট্র: ইরানকেপ্রত্যুত্তরের দায়িত্বশীলতা নিতে হবেবলে হুঁশিয়ারি দেয়।

·       চীন রাশিয়া: মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়, কিন্তু ইসরায়েলের "আগ্রাসী মনোভাব"কেও দায়ী করে।

·       সংযুক্ত আরব আমিরাত সৌদি আরব: উদ্বেগ প্রকাশ করে, আঞ্চলিক শান্তির আহ্বান জানায়।


 ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

এই মুহূর্তে ইরান ইসরায়েলের মধ্যে পুরোমাত্রার যু/দ্ধ শুরু না হলেও পরিস্থিতি তা- ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদি ইসরায়েল আবার পাল্টা আঘাত করে, তাহলে ইরানের মাটিতে বড় আকারে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সম্ভাব্য পরিণতি:

·       পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যু/দ্ধ

·       তেলের দাম বৃদ্ধি

·       বিশ্বমন্দার ঝুঁকি

·       যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি সংঘর্ষ


 উপসংহার: সর্বনাশের পথে দুই শত্রু

ইরানকে থামাতে গিয়ে ইসরায়েল এমন এক বিপদ ডেকে এনেছে, যা তার নিজের অস্তিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলছে।

ইসরায়েল চাইছে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ,
আর ইরান চাইছে মুসলিম ভূমির স্বাধীনতা।

কিন্তু এই দুইটি লক্ষ্যই যদি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়, তাহলে শুধু এই দুই দেশ নয়পুরো বিশ্বই এক নতুন সংকটের মুখে পড়বে।

 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url