প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া
প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া
.png)
রাশিয়া বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ তৈরি করেছে এবং ভবিষ্যতের কূটনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে।
তালেবান সরকার, রাশিয়া, আফগানিস্তান, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, তালেবান রাশিয়া সম্পর্ক, মস্কো কাবুল স্বীকৃতি, রাশিয়ার ভূরাজনীতি
আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের তিন বছর পর, অবশেষে বিশ্বে প্রথমবারের মতো একটি রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের স্বীকৃতি দিল। সেই রাষ্ট্রটি হলো — রাশিয়া।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আফগানিস্তানের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করে জানিয়ে দেয়, তালেবান এখন কাবুলের বৈধ সরকার।
এই সিদ্ধান্ত শুধু আফগানিস্তানের জন্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বের জন্য এক গভীর বার্তা বহন করে।
রাশিয়ার স্বীকৃতি: কী ঘটেছে?
২০২৫ সালের জুলাই মাসের শুরুতেই রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে গুল হাসান হাসান নামক তালেবান মনোনীত রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে তালেবান সরকারকে একপ্রকার কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছে মস্কো।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন,
“আমরা আফগানিস্তানে গঠিত বর্তমান প্রশাসনকে একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছি।”
ঐতিহাসিক পটভূমি: তালেবান কিভাবে ক্ষমতায় এল?
২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর, তালেবান আবারও দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। তবে, এই প্রশাসন এখনও কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি — জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কেউই তালেবানকে বৈধ সরকার হিসেবে মেনে নেয়নি।
অন্যদিকে রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবেই আফগানিস্তানে সক্রিয়। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে অংশ নেওয়া রাশিয়া এবার কৌশলগত সমঝোতা ও অর্থনৈতিক স্বার্থে তালেবান সরকারের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
কেন রাশিয়া এই সিদ্ধান্ত নিল?
রাশিয়ার তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পেছনে কয়েকটি কৌশলগত কারণ স্পষ্ট:
১. আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার
মধ্য এশিয়ায় চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রাশিয়ার জন্য অস্বস্তির। তালেবানকে স্বীকৃতি দিয়ে রাশিয়া একদিকে আফগানিস্তানে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করতে চায়, অন্যদিকে চীনের পাশে শক্তিশালী শরিক হিসেবে দাঁড়াতে চায়।
২. জ্বালানি ও খনিজ সম্পদে হাত রাখা
আফগানিস্তান খনিজ সম্পদে ভরপুর — লিথিয়াম, কপার, ইউরেনিয়ামসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মজুদ রয়েছে। এই সম্পদে আধিপত্য চায় রাশিয়া।
৩. নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ
তালেবান ও আইএস (ISIS-K)-এর মধ্যে মতানৈক্য আছে। রাশিয়া চায় তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে মধ্য এশিয়ায় উগ্রবাদী হামলার আশঙ্কা কমানো।
তালেবান সরকারের প্রতিক্রিয়া
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন,
“রাশিয়ার এই পদক্ষেপ শুধু স্বীকৃতিই নয়, এটা আমাদের জন্য সম্মানের বিষয়। এটি প্রমাণ করে—বিশ্ব আমাদের গ্রহণ করতে শুরু করেছে।”
তালেবান আরও জানায়, তারা রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য, অবকাঠামো, কৃষি ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।
_________________________________
আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন
_______
অন্যান্য দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্র:
রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে জানায়, “তালেবান এখনও নারীর অধিকার, মানবাধিকার রক্ষা করছে না। এমন একটি প্রশাসনকে স্বীকৃতি দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন।”
চীন ও ইরান:
যদিও এখনও তালেবানকে সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, তবে রাশিয়ার এই পদক্ষেপের প্রতি নীরব সমর্থন রয়েছে। চীন আগে থেকেই আফগানিস্তানে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
পাকিস্তান:
তালেবান ঘনিষ্ঠ দেশ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান এখনও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। তবে কূটনৈতিক বার্তালাপে রাশিয়ার ভূমিকাকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছে।
বিশেষ বিশ্লেষণ: রাশিয়ার স্বীকৃতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
এই স্বীকৃতি তালেবান সরকারের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করার পথে একটি বড় পদক্ষেপ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন:
• ✦ এটি অন্য দেশগুলোকে উৎসাহিত করতে পারে তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে
• ✦ দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার প্রভাব আরও মজবুত হবে
• ✦ তালেবান সরকার আন্তর্জাতিকভাবে আরও আত্মবিশ্বাস পাবে
তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং নারীদের শিক্ষা-নিষেধাজ্ঞা এখনো বিশ্বে এই সরকারকে গ্রহণযোগ্য হতে দিচ্ছে না।
রাশিয়া-তালেবান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
ক্ষেত্র সম্ভাব্য উন্নয়ন
অর্থনীতি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, খনিজ সম্পদে চুক্তি
নিরাপত্তা সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, সীমান্ত নজরদারি
অবকাঠামো রাশিয়ান প্রকৌশল সংস্থার মাধ্যমে রোড-রেল উন্নয়ন
কৃষি খাদ্য সহায়তা ও কৃষি প্রযুক্তি
রাশিয়া তালেবান সরকারকে কেন স্বীকৃতি দিল?
রাশিয়া তালেবান সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করতে চায়। আঞ্চলিক প্রভাব বাড়ানো এবং পশ্চিমা জোটের প্রভাব কমানোও এর উদ্দেশ্য।
তালেবান সরকারকে এখন পর্যন্ত কোন কোন দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে?
এখন পর্যন্ত রাশিয়া একমাত্র দেশ যারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চীন, পাকিস্তান, কাতার, ইরান—তালেবান সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখলেও তারা এখনো স্বীকৃতি দেয়নি।
রাশিয়ার এই পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কেমন?
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চীন, ইরান ও পাকিস্তান অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে।
রাশিয়ার স্বীকৃতি কি তালেবান সরকারের আন্তর্জাতিক বৈধতা নিশ্চিত করবে?
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে একে বৈধতা বলতে হলে আরও বহু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের স্বীকৃতি প্রয়োজন।
তালেবান সরকার এখন কেমন পরিচালিত হচ্ছে?
তালেবান একটি কট্টর শরিয়া-ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা চালু করেছে। নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও স্বাধীন চলাফেরায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, যার কারণে তারা আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে।
উপসংহার:
রাশিয়া তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
এই পদক্ষেপ শুধু আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই নয়, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মানচিত্রেও বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
এখন দেখার বিষয়, এই স্বীকৃতিকে অনুসরণ করে আরও দেশ তালেবান সরকারকে বৈধতা দেয় কি না—নাকি রাশিয়াই একমাত্র পথে হেঁটে গেল।
• ✅ শক্তিশালী Meta Description
• ✅ Focus Keywords
• ✅ SEO Tags
• ✅ FAQ Section
• ✅ উপযুক্ত উপশিরোনামসহ News Structure
• SEO Tags:
• #রাশিয়া #তালেবান #আফগানিস্তান #স্বীকৃতি #আন্তর্জাতিকরাজনীতি #RussiaTalibanRecognition #TalibanGovernment #Geopolitics