Banner 728x90


ইসরায়েলে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ হামলার হুমকি দিল ইরান!

 


 ভূমিকা: উত্তাল মধ্যপ্রাচ্য, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতাদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি যে ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তেহরান থেকে প্রকাশিত এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইসরায়েল যদি তার আগ্রাসন না থামে, তাহলে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, এ হুমকি শুধু কথার কথা নয়—ইরান এরইমধ্যে তার সামরিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে রেখেছে। সেইসাথে হিজবুল্লাহ, হুথি বিদ্রোহী এবং অন্যান্য প্রো-ইরানি গোষ্ঠীকে যুদ্ধ-প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।


ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার পেছনের পটভূমি

গত কয়েক মাসে গাজা, সিরিয়া এবং লেবাননে ইসরায়েলের একাধিক আক্রমণে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও কূটনৈতিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে, দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে এক বিমান হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিহত হন।

এরপর থেকেই ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিশোধের হুমকি দিয়ে আসছে। তবে এবার ইরান যা বলেছে, সেটি একপ্রকার "পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের ঘোষণা" হিসেবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।


ইরানের হুমকির বক্তব্য: কী বলা হয়েছে?

ইরানের রেভ্যুলিউশনারি গার্ডের কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এক প্রেস কনফারেন্সে বলেন:

“ইসরায়েল আগুন নিয়ে খেলছে। এবার আমরা মুখে নয়, সরাসরি হাতে অস্ত্র তুলে নিচ্ছি। তারা আমাদের শহীদ করেছে, এবার আমরা তাদের অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জ জানাবো।”

তেহরান সরকারের এক মুখপাত্র রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন:

“ইসরায়েল যদি এক ইঞ্চিও ভুল করে, তাহলে তেল আবিব, হাইফা, নাজারেথসহ বহু শহর কয়েক মিনিটের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।”


ইরানের সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি

সূত্র অনুসারে, ইরান ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছে। হরমুজ প্রণালী এবং দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন গোপন ঘাঁটি থেকে আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বিশেষ প্রস্তুতিতে রয়েছে নিচের বিষয়গুলো:

  • সশস্ত্র ড্রোন স্কোয়াড: ইরানের হাতে রয়েছে শত শত কামিকাজি ড্রোন।

  • ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র: শাহাব-৩, খোররামশাহর, ফাতেহ-১১০ — যেগুলো ২০০০ কিমি পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

  • সাইবার হামলার ইউনিট: ইসরায়েলের নিরাপত্তা অবকাঠামো ভাঙার জন্য একাধিক সাইবার ইউনিট প্রস্তুত।

  • জল-স্থল-আকাশ সমন্বিত অভিযান পরিকল্পনা

  • ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও প্রস্তুতি

ইসরায়েল এ হুমকিকে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে নিয়েছে। তেল আবিবে এক জরুরি নিরাপত্তা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন:

“ইসরায়েল যুদ্ধ চায় না, তবে যদি যুদ্ধ আসে—আমরা প্রস্তুত। আমরা আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব যেকোনো মূল্যে।”

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (IDF) ইতোমধ্যেই গোলান মালভূমি, নেভে হানান, আশকেলন এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে মোতায়েন বৃদ্ধি করেছে।


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক তৎপরতা

যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, রাশিয়া ও চীন—সবপক্ষই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হোয়াইট হাউজ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে:

“আমরা ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এই সংঘাত বিস্তৃত হলে তা গোটা অঞ্চলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।”

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “আমরা সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে উত্তেজনা কমাতে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”


বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ: সত্যিই কি বড় যুদ্ধ আসছে?

মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ আমির আল-বশারির মতে:
“এই মুহূর্তে যুদ্ধ লাগা শুধু সময়ের ব্যাপার। ইরান যদি সত্যিই সরাসরি ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে বড় হামলা চালায়, তাহলে তা হবে ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপুর যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংঘাত।”

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাইকেল ও’নিল বলেন:
“ইরান তার প্রভাব ও অবস্থান ধরে রাখতে চায়। যদি তারা সরাসরি ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করে, সেটা শুধু দুটি দেশের মধ্যে থাকবে না—সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জ্বলবে।”


সম্ভাব্য টার্গেট: কোথায় হামলা হতে পারে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের হামলার লক্ষ্য হতে পারে:

  • তেল আবিব ও হাইফা বন্দরনগরী

  • ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি

  • ডিমোনা পারমাণবিক কেন্দ্র

  • আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্র


ইরান যদি হামলা চালায়, ফলাফল কী হতে পারে?

চরম মানবিক বিপর্যয়: হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি হতে পারে।
অর্থনৈতিক ধস: তেল সরবরাহে বিপর্যয়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম হু হু করে বাড়বে।
আঞ্চলিক যুদ্ধ: হিজবুল্লাহ, হুথি, শিয়া মিলিশিয়া জড়িত হয়ে পড়বে; সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার প্রভাবিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল জোটের পাল্টা হামলা: যা ইরানেও ব্যাপক ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।


জনমনে প্রতিক্রিয়া: ইসরায়েল ও ইরানে আতঙ্ক

ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ গ্যাস মাস্ক কিনছে, পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করছে।
ইরানেও যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে—দোকানপাট বন্ধ, বিমানবন্দরগুলোতে কড়াকড়ি।


সাম্প্রতিক পরিস্থিতি: যুদ্ধ কি অনিবার্য?

ইসরায়েলের একটি সামরিক হেলিকপ্টার গতকাল লেবাননে প্রবেশ করলে হিজবুল্লাহ প্রতিরোধ করে। ইরাক সীমান্তেও হুথি মিলিশিয়া সরব হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান অবস্থায় শুধু একটি ভুল বোঝাবুঝি বা উসকানিমূলক হামলাই এই দুই দেশকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারে।


উপসংহার: উত্তপ্ত পরিস্থিতি, পুরো অঞ্চল যুদ্ধের মুখে

ইরান ও ইসরায়েল বর্তমানে এমন এক দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে, যার অবসান সহজ নয়। দ্বিপাক্ষিক বিবাদ এখন বহুপাক্ষিক সংঘাতে রূপ নিতে যাচ্ছে। ইরানের এই "স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ হামলার হুমকি" মধ্যপ্রাচ্যকে আবারও বারুদের স্তুপে পরিণত করতে পারে।

আন্তর্জাতিক কূটনীতি, আলোচনার টেবিল—সবই এখন শেষ আশ্রয়। না হলে, আগামী দিনগুলোতে আমরা হয়তো ইতিহাসের এক ভয়াবহ যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছি।


আপনার মতামত দিন
এই পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে নিচে মন্তব্য করুন। এমন আরও রিপোর্ট পেতে আমাদের ফলো করুন।





Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url