Banner 728x90


ইসরায়েলে ইরানের অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ শুরু মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের নতুন অধ্যায়

 


 সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

২০২৫ সালের ১৩ জুন মধ্যরাতে ইরান ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ (Operation True Promise III) নামে  এই অভিযানে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ এক মুহূর্তে বদলে যেতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা একে ‘মধ্যপ্রাচ্যে তৃতীয় মহাযুদ্ধের সূচনা সংকেত’ বলেও উল্লেখ করেছেন।


 অপারেশনের মূল লক্ষ্য

ইরানি রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC) জানায়, এই অপারেশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল—

  • ইসরায়েলের নেভাটিম বিমানঘাঁটি

  • দিমোনা পারমাণবিক স্থাপনা

  • সদরদপ্তর ও গোয়েন্দা ইউনিট

  • তেল আবিব ও আশদোদের রাডার সেন্টার

  • সাইবার যুদ্ধ কেন্দ্র

প্রতিটি লক্ষ্যবস্তুর ওপর নির্ভুলভাবে মিসাইল এবং ড্রোন দিয়ে আঘাত হানা হয়।


 ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরণ

 ড্রোন:

  • শাহেদ-১৩৬ ও শাহেদ-২৩৮ ড্রোন ব্যবহার করে দূরপাল্লার হামলা

  • আত্মঘাতী ড্রোন দিয়ে সেনাঘাঁটির ভেতরে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়

 মিসাইল:

  • সেজিল ও খোরামশাহর নামের ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহৃত হয়েছে

  • মিসাইলগুলো ১৮০০–২০০০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে

 ইলেকট্রনিক জ্যামার:

  • ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেম অকার্যকর করতে বিশেষ ইলেকট্রনিক জ্যামিং ডিভাইস ব্যবহার করা হয়


 অপারেশনের অভিঘাত: কী ঘটেছে ইসরায়েলে?

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (IDF) জানিয়েছে, এ হামলায়—

  • কমপক্ষে ৯ জন সামরিক সদস্য নিহত

  • ৭১ জনের বেশি আহত

  • ৩টি বড় সেনা ক্যাম্প ক্ষতিগ্রস্ত

  • ৫টি যুদ্ধবিমান ও ১টি F-35 ড্রোন ডিপো ধ্বংস

  • ডিমোনা পারমাণবিক কেন্দ্রে ছোট বিস্ফোরণ ঘটেছে, যদিও বড় ক্ষয়ক্ষতির দাবি অস্বীকার করেছে ইসরায়েল

তেল আবিবে আতঙ্কের মধ্যে হাজারো মানুষ রাতভর বাংকারে অবস্থান নেয়।


 ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েল সরকার একে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে দেখছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন:

“ইরান একটি লাল রেখা অতিক্রম করেছে। এবার আমরা চুপ থাকব না। প্রতিশোধ নেওয়া হবে। পূর্ণ শক্তি দিয়ে।”

ইসরায়েল একই দিন মধ্যরাতেই ইরানে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি শুরু করে এবং সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়।


 পেছনের কারণ: কেন এতো বড় অপারেশন?

ইরান জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ইসরায়েল Operation Rising Lion নামে এক গোপন অভিযানে তেহরান ও ইস্পাহানের সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। এতে ইরানের কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ ৩৫ জন সেনা নিহত হয়।

এরপরই ইরান সর্বোচ্চ নেতার অনুমোদনে True Promise III অপারেশন প্রস্তুত করে।


 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

🇺🇸 যুক্তরাষ্ট্র:

  • প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা ইসরায়েলের পাশে আছি। তবে যুদ্ধ না চাইলে দুই পক্ষকেই সংযমী হতে হবে।”

🇷🇺 রাশিয়া:

  • রাশিয়া জানিয়েছে, যুদ্ধ ছড়ালে তারা ইরানপন্থী অবস্থান নেবে এবং আমেরিকান হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে যাবে।

🇨🇳 চীন:

  • চীন ‘দু’পক্ষকে আলোচনায় বসার আহ্বান’ জানিয়েছে, তবে ইরানের প্রতিক্রিয়াকে “বাধ্যতামূলক প্রতিরক্ষা” বলে উল্লেখ করেছে।


 অর্থনৈতিক প্রভাব

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে—

  • তেলের দাম ৭.৮% বেড়ে ৯২ ডলার/ব্যারেল ছাড়িয়ে গেছে

  • গোল্ড মার্কেটে ২.৩% দাম বৃদ্ধি

  • ক্রিপ্টো মার্কেটেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে

বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে পেট্রোলিয়াম পণ্যের বাজারে অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে।


বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রেজা হাশেমি বলেন:

“ইরান এ বার্তা দিতে চেয়েছে যে, তার সামরিক সক্ষমতা শুধু কাগুজে নয়, বাস্তবে কার্যকর।”

 মধ্যপ্রাচ্য গবেষক লরেনস মিলার:

“True Promise III মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামো পাল্টে দেবে। এটি শুধু ইরান-ইসরায়েল নয়, বিশ্বশক্তিদের সরাসরি সংঘর্ষে ঠেলে দেবে।”


 আগামী দিনের সম্ভাবনা

ইরান ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে:
“আমাদের অপারেশন শেষ হয়নি। প্রয়োজনে True Promise IV ও V চালানো হবে।”
ইসরায়েলও ১০০+ যুদ্ধবিমান স্ট্যান্ডবাই রেখেছে।

এদিকে হিজবুল্লাহ, হামাস এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠীও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একযোগে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে।


 উপসংহার

‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ ইতিহাসে এক ভয়াবহ সামরিক অভিযান হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এই ঘটনার মাধ্যমে শুধু ইসরায়েল নয়, গোটা বিশ্ব বুঝেছে—ইরান এখন আর প্রতিক্রিয়া জানায় না, বরং পরিকল্পিত আক্রমণ চালায়।

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি মুহূর্ত অস্থিরতায় ঘেরা, আর বিশ্বের চোখ এখন তেল আবিব ও তেহরানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url