Banner 728x90


ইরানের হাইপারসনিক হামলায় কাঁপছে ইসরায়েল, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

 

ভূমিকা: মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের নতুন রূপ

মধ্যপ্রাচ্য, একটি ভূখণ্ড যা যুগের পর যুগ ধরে রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। তবে ২০২৫ সালের জুনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ইরান তাদের সর্বাধুনিক হাইপারসনিক মিসাইল ব্যবহার করে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনাগুলোতে সরাসরি আঘাত হানে। এই হামলা শুধু ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করেনি, বরং পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।


 হাইপারসনিক মিসাইল কী এবং কেন এটি ভয়ঙ্কর?

হাইপারসনিক মিসাইল এমন এক ধরনের অস্ত্র যা শব্দের গতির চেয়ে কমপক্ষে ৫ গুণ দ্রুত চলতে পারে (Mach 5 বা তার বেশি)। ইরান এই প্রযুক্তিতে তৈরি "ফাতেহ-১২৭এইচ" নামের মিসাইলগুলো ব্যবহার করেছে বলে দাবি করেছে। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র থার্মাল ট্র্যাকিং, উপগ্রহ নিয়ন্ত্রিত ন্যাভিগেশন এবং ইলেকট্রনিক জ্যামিং প্রতিরোধী হওয়ায় প্রতিপক্ষের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহজে এটি শনাক্ত কিংবা থামাতে পারে না।



 হামলার লক্ষ্যবস্তু ও ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ

 ১. সামরিক ঘাঁটি

ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত "রামাত ডেভিড" বিমানঘাঁটিতে বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়। এখানে থাকা দুটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় বলে জানা গেছে। এছাড়া, মিসাইল স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি ও রাডার কন্ট্রোল সেন্টার ধ্বংস হয়।

 ২. ইসরায়েলি গোয়েন্দা ভবন

তেলআবিবের কাছে মোসাদের একটি গোপন গোয়েন্দা ভবনে সরাসরি মিসাইল আঘাত হানে। এতে ভবনটি আংশিক ধসে পড়ে এবং বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার মৃত্যু হয়।

 ৩. ইলেকট্রিক গ্রিড ও যোগাযোগব্যবস্থা

হামলার ফলে ইসরায়েলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর — তেলআবিব, হাইফা, আশদোদ, ও বিয়ারশেভায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যোগাযোগব্যবস্থার উপর এই আক্রমণ সামরিক প্রতিক্রিয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করেছে।


 সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক

হামলার পরপরই ইসরায়েলের প্রধান শহরগুলোতে সাইরেন বাজতে শুরু করে। বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যায়। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৪৩ জন সাধারণ নাগরিক আহত হয়েছেন এবং দুই শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

একজন তেলআবিববাসী জানান,
"আমি যখন রান্নাঘরে ছিলাম, তখন হঠাৎ জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে বুঝলাম, যুদ্ধ এসে গেছে আমাদের দরজায়।"


 ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া: যুদ্ধের ঘোষণা

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন,
"ইরানের এই হামলা আমাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের ঘোষণা। আমরা উপযুক্ত সময়ে পাল্টা জবাব দেব।"

ইসরায়েলের ডিফেন্স মিনিস্ট্রি ইতোমধ্যে রিজার্ভ বাহিনীকে সক্রিয় করেছে এবং সীমান্ত এলাকায় সেনা মোতায়েন বৃদ্ধি করেছে। ড্রোন ও বিমান চলাচল তীব্র গতিতে শুরু হয়েছে সিরিয়া ও লেবানন সীমান্তে।


 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

🇺🇸 আমেরিকা

হোয়াইট হাউস ইরানের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, "আমরা ইসরায়েলের পাশে আছি। এই হামলা বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।"

🇷🇺 রাশিয়া

রাশিয়া এক বিবৃতিতে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায়, তবে ইরানের নিরাপত্তা উদ্বেগও বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দেয়।

🇪🇺 ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইইউ নেতারা জরুরি বৈঠক ডেকেছে। ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য এই হামলাকে 'অবিচারিক ও সামরিক উত্তেজনামূলক' বলেছে।


 সামরিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে

 হাইপারসনিক যুগে প্রবেশ

বিশ্লেষক জনাথন রোয়েন বলেন,
"ইরানের এই হামলা শুধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নয়, বরং বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়া যে তারা হাইপারসনিক যুগে প্রবেশ করেছে।"

 ইসরায়েলের দুর্বলতা প্রকাশ

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এলি সাদান বলেন,
"এই হামলা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছে। আয়রন ডোম, ডেভিড স্লিং— কোনো কিছুই হাইপারসনিক গতির সামনে টিকতে পারেনি।"


 ঐতিহাসিক পটভূমি: এই হামলার উৎস কোথায়?

২০২৪ সালের শেষের দিকে সিরিয়ার দামেস্কে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় ইরানি বিপ্লবী গার্ডের একাধিক কমান্ডার নিহত হন। এরপরই ইরান ঘোষণা দেয়, তারা উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত জবাব দেবে।

‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ ছিল এরই বাস্তব প্রতিফলন।


 ইসরায়েলের পাল্টা প্রস্তুতি: “অপারেশন আয়রন জাস্টিস”?

ইসরায়েল এক গোপন অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার নাম হতে পারে অপারেশন আয়রন জাস্টিস। এই অভিযানের মাধ্যমে তেহরান, ইস্পাহান, ও খুজেস্তানে মিসাইল স্থাপনা এবং পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে।


 সামরিক ভারসাম্য বদলে যাবে?

হ্যাঁ। এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্য স্থায়ীভাবে বদলে যেতে পারে। ইরান দেখিয়েছে, তারা শুধু পারমাণবিক উচ্চাশাই নয়, বাস্তব মিসাইল ক্ষমতাও অর্জন করেছে। ফলে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেক দেশই নিরাপত্তার দিক দিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে বাধ্য হবে।


 বিশ্ব মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া

CNN, BBC, Al Jazeera, RT, PressTV — প্রতিটি আন্তর্জাতিক মিডিয়াই এই খবরকে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে প্রচার করছে। বিশ্লেষণ চলছে “ইরান-ইসরায়েল সরাসরি যুদ্ধ কি অনিবার্য?” প্রশ্নে।


 মানবিক প্রভাব ও উদ্বেগ

জাতিসংঘ বলছে, এই ধরনের সংঘাত মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ইসরায়েলে খাদ্য সরবরাহে সমস্যা, চিকিৎসাসেবা বিঘ্ন এবং শিশুদের ওপর মানসিক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।


 উপসংহার: শান্তির সংকট?

ইরানের হাইপারসনিক হামলা একটি সামরিক ঘটনা হলেও এর প্রভাব কেবল সীমান্তে থেমে থাকবে না। এটি কূটনীতি, অর্থনীতি, মানবাধিকার এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করবে। ইসরায়েল কীভাবে জবাব দেয়, সেটিই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের পথ।


 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url