ট্রাম্প ও মাস্ককে হত্যা করার হুমকি আল কায়েদার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্বিগ্ন করে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং টেক জায়ান্ট ইলন মাস্ককে সরাসরি হত্যা করার হুমকি দিয়েছে কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদা। অনলাইনে প্রচারিত একটি ভিডিও বার্তায় এই হুমকির কথা তুলে ধরেছে সংগঠনটি। এতে পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী এবং ইসলামবিরোধী কাজের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ‘টার্গেট’ করার ঘোষণা দেওয়া হয়, যার তালিকায় ট্রাম্প এবং মাস্কের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে।
ভিডিও বার্তা প্রকাশ: স্পষ্ট হুমকি
ভিডিওতে আরো বলা হয়, ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে "প্রযুক্তির অপব্যবহার", "মতপ্রকাশের নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত" এবং "মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে হস্তক্ষেপের" অভিযোগ আনা হয়েছে এই দুই বিতর্কিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থার সতর্কতা
এই হুমকি সামনে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই (FBI) এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। ট্রাম্পের দেহরক্ষী ইউনিট এবং ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলকে সতর্ক করা হয়েছে।
এফবিআইয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, "আমরা প্রতিটি হুমকির মূল্যায়ন করছি এবং জনগণের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।"
ট্রাম্প ও মাস্ক এখনো নীরব
এখন পর্যন্ত এই হুমকি নিয়ে ট্রাম্প কিংবা ইলন মাস্কের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মাস্কের ঘনিষ্ঠ সূত্রমতে, তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে এবং টেসলা ও স্পেসএক্সের হেডকোয়ার্টারে নিরাপত্তা তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মন্তব্য: প্রচারণা না বাস্তব হুমকি?
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের হুমকি কখনো কখনো প্রোপাগান্ডা হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। তবে যেহেতু ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং মাস্ক বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী উদ্যোক্তাদের একজন—তাই এই হুমকিকে একেবারে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. রবার্ট ম্যাকগিভার বলেন, “আল কায়েদা বর্তমানে মাঠে দুর্বল থাকলেও, অনলাইন প্রচারণার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ভীতির সঞ্চার ঘটানোর চেষ্টা করছে। এই হুমকি সেই প্রচেষ্টারই অংশ।”
অতীতেও হুমকির ইতিহাস
আল কায়েদা অতীতেও বিশ্বনেতা, সাংবাদিক ও লেখকসহ ইসলামবিরোধী কথিত ব্যক্তিদের হত্যার হুমকি দিয়ে এসেছে। ২০০৫ সালে ডেনিশ কার্টুন ইস্যুতে একাধিক লেখক এবং শিল্পীকে তারা লক্ষ্যবস্তু করেছিল। ২০১5 সালে চার্লি হেবদো কার্যালয়ে হামলার পেছনেও ছিল আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী।
প্রযুক্তিবিদ কেন টার্গেটে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইলন মাস্ককে হুমকির অন্যতম কারণ হতে পারে তার মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার), যেখানে ইসলামবিরোধী মন্তব্যের অবাধ প্রচার এবং কিছু ক্ষেত্রের সেন্সরশিপ অপসারণ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং উপগ্রহ প্রযুক্তিতে তার অগ্রণী ভূমিকা ইসলামপন্থী জঙ্গিদের কাছে “পশ্চিমা আধিপত্যের প্রতীক” হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই হুমকি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্সসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের গোয়েন্দা সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং প্রয়োজনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
উপসংহার
যদিও এই হুমকির বাস্তবতা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে, তবুও আল কায়েদার মতো একটি সংগঠনের প্রকাশ্য হুমকি কোনোভাবেই অবহেলা করার মতো নয়। রাজনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত অঙ্গনের এই দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু করার মাধ্যমে জঙ্গিগোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া কভারেজ এবং সমর্থক গোষ্ঠীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।