Banner 728x90


টেলিগ্রামে প্রেম, বিয়ের প্রলোভনে মাদ্রাসাছাত্রীকে যৌনপল্লিতে বিক্রি, যুবক গ্রেফতার

 

টেলিগ্রামে প্রেম, বিয়ের প্রলোভনে মাদ্রাসাছাত্রীকে 
যৌনপল্লিতে বিক্রি, যুবক গ্রেফতার  

একটি সাধারণ টেলিগ্রাম চ্যাট। প্র

থমে কথোপকথন, তারপর প্রেম, এবং অবশেষে বিয়ের প্রলোভন। বিশ্বাস করে সবকিছু ছেড়ে প্রেমিকের হাত ধরেছিল এক মাদ্রাসাছাত্রী। কিন্তু সেই প্রেমিকই তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। যাকে ভালোবেসেছিল, সে-ই তাকে বিক্রি করে দিল প'তি'তালয়ে!
এই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে।


 ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে

 টেলিগ্রামে পরিচয়

মাদ্রাসার ১৬ বছর বয়সী ছাত্রীটি কিছুদিন আগে টেলিগ্রামে যুক্ত হয় একটি ইসলামিক গ্রুপে। সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় এক যুবকের, যিনি নিজেকে "ইসলামিক ভাই" বলে পরিচয় দেয়। কথাবার্তা শুরু হয় ইসলামি আলোচনা দিয়ে, কিন্তু ধীরে ধীরে তা প্রেমে রূপ নেয়।
তরুণটি দাবি করে, সে ঢাকার একটি কলেজের ছাত্র। বয়স ২২। স্বভাব-চরিত্রে বিনয়ী, ধর্মভীরু ও মিষ্টভাষী। সেই পরিচয়ের আড়ালে যে একটি হায়েনা লুকিয়ে ছিল, তা বোঝার সময় হয়নি মেয়েটির।

বিয়ের প্রলোভন

দুই মাস ধরে টেলিগ্রামে চলা কথোপকথনের একপর্যায়ে প্রেমিক মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বলে,

“তুমি অনেক পবিত্র। আমি চাই, তোমাকে হালালভাবে নিজের জীবনে আনতে।”

এই প্রলোভনে মেয়েটি রাজি হয় পালিয়ে যেতে। বলে,

“আমার পরিবার রাজি হবে না, তাই যদি তুমি নিতে চাও, আমি রাজি আছি।”

পালিয়ে যাওয়া ও ‘নতুন জীবন’-এর স্বপ্ন

মেয়েটি এক রাতে নিজের প্রয়োজনীয় কিছু কাপড় ও টাকা নিয়ে চুপিসারে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। প্রেমিক তাকে ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যায়। বলে,

“আগে বাসা ভাড়া নিয়ে রাখছি, তারপর বিয়ে হবে।”

এরপর তাকে একটি হোটেলে উঠায় এবং বলে,

“আগে একটু রেস্ট করো, পরদিন কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করব।”

কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভয়ানক ভিন্ন।


 ছলনার শেষ ধাপ: বিক্রি প'তি'তালয়ে

পরদিন সন্ধ্যায় এক অপরিচিত নারী এসে মেয়েটিকে হোটেল থেকে নিয়ে যায়। বলে,

“আমি ওর বোন। বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।”

বাসা নয়, সে ছিল একটি বেসরকারি পতিতালয়-সদৃশ ঘর, যেখানে আরও কয়েকজন কিশোরী ও নারীকে আটকে রাখা হয়েছিল।

আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন

প্রথম দিন থেকেই মেয়েটিকে বাধ্য করা হয় অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে। সে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট এবং খাবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। কৌশলে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। বাইরে যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ।


 উদ্ধার অভিযান: পরিবারের লড়াই

মেয়েটি পালিয়ে যাওয়ার পরপরই পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। টেলিগ্রাম চ্যাটের স্ক্রিনশট, কল রেকর্ড এবং কিছু গোপন তথ্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ একটি বিশেষ টিম গঠন করে। তারা প্রযুক্তির সহায়তায় মেয়েটির মোবাইলের শেষ লোকেশন ট্র্যাক করে এবং একটি ‘বিশেষ জায়গায়’ অভিযান চালায়।
অবশেষে তিন দিন পর সেই তথাকথিত বাসা থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়।


 প্রেমিকসহ ৪ জন গ্রেপ্তার

এই ঘটনায় মেয়েটির প্রেমিকসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুজন নারী, যারা দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, টেলিগ্রামে ছদ্মনামে এমন বহু কিশোরীকে ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা এখন রিমান্ডে রয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।


 আইনগত ব্যবস্থা ও চার্জশিট

পুলিশ জানিয়েছে,

“ধারা ৭, ৯(১), ১১—নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে মামলা হয়েছে। পাচার প্রতিরোধ আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ধারা-৬৬ এর ভিত্তিতেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

এই মামলায় অভিযোগ গঠন এবং চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ আশা করছে, দ্রুতই আদালতে মামলার বিচার শুরু হবে।


 মেয়েটির ভাষ্য: "ভেবেছিলাম বিয়ে করব, জানতাম না এভাবে বিক্রি হবে!"

উদ্ধারের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মেয়েটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে,

“আমি তো শুধু ভালোবাসতে চেয়েছিলাম। বিয়ে করে শান্তি চাইছিলাম। জানতাম না ও এতটা খারাপ। ও আমার সব শেষ করে দিয়েছে।”

এই বক্তব্য শুনে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।


 সমাজের চোখে: অনলাইন প্রেম কতটা বিপজ্জনক?

ঘটনাটির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, কিশোর-কিশোরীদের হাতে যখন মোবাইল ও ইন্টারনেট থাকে, তখন তাদের মানসিক ও নৈতিক গঠন খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন,

“টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপে এনক্রিপশন থাকায় অনেক অপরাধী আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে ‘সাইবার মনিটরিং সেল’-এর তৎপরতা বাড়ানো দরকার।”


 ধর্মীয় ও পারিবারিক দৃষ্টিকোণ

মাদ্রাসাছাত্রীদের ধর্মীয় জ্ঞান থাকলেও অনলাইনের কুপ্রভাবে তারা বিভ্রান্ত হতে পারে। ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন,

“শয়তান প্রথমে ভালো মুখোশ পরে আসে। বিয়ের কথা বলে নারীদের বিপথে চালিত করে। তাই অভিভাবকদের দায়িত্ব অনেক বেশি।”

অভিভাবকদের প্রতি বারবার আহ্বান জানানো হচ্ছে যেন তারা সন্তানদের মোবাইল ব্যবহারে নজর রাখেন।


 উপসংহার: প্রযুক্তির সঙ্গে সচেতনতা জরুরি

এই ঘটনার পর আরও একটি বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে গেছে—প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনে আশীর্বাদ, তেমনি সচেতন না হলে তা অভিশাপে পরিণত হতে পারে।
বিশ্বাস, প্রেম, বিয়ে—এই সবকিছুই তখনই সুন্দর, যখন তা হয় সম্মান ও নিরাপত্তার ভিত্তিতে।
কিন্তু যখন এই সম্পর্কের আড়ালে থাকে প্রতারণা ও বিক্রির মতো নৃশংসতা, তখন সমাজকে জেগে উঠতে হয়।


 বার্তা:

এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা সবাইকে সচেতন করতে চাই:
অচেনা কারও প্রলোভনে নিজের জীবন ধ্বংস করবেন না। ভালোবাসার চেয়ে জীবনের নিরাপত্তা আগে!



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url