ফিলিস্তিনের অধিকারে নিক্যাপের সমর্থন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা
ফিলিস্তিনের অধিকারে নিক্যাপের সমর্থন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা
তারিখ: ৩০ জুন ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। এবার এই সমর্থনের তালিকায় নাম লেখালো দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নিক্যাপ (NCAP – National Coalition for the Advancement of Palestine)।
এই সংগঠনটি তাদের একটি শক্ত অবস্থান থেকে ইসরায়েলি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে এবং স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় অধিকারের প্রতি অটল সমর্থন থাকবে তাদের।
নিক্যাপের বিবৃতি: ‘ফিলিস্তিন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য’
দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী প্রিটোরিয়াতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিক্যাপ-এর প্রধান মুখপাত্র থাবো এমকিজে বলেন:
“ইসরায়েলের দখলদারিত্ব এবং সামরিক আগ্রাসন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি, মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ থেকে বঞ্চিত। আমরা এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার অঙ্গীকার করছি।”
তিনি আরও জানান, নিক্যাপ শুধু বিবৃতি দিয়ে থেমে থাকবে না, বরং আন্তর্জাতিক আদালতে ন্যায়বিচারের দাবি, বিভিন্ন দেশের সংসদে চাপ সৃষ্টি এবং গণআন্দোলনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কাজ চালিয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিক্যাপের প্রভাব
নিক্যাপ কেবল একটি আঞ্চলিক সংগঠন নয়। এটি আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার অনেক মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা রক্ষা করে চলেছে। এ কারণে সংগঠনটির বক্তব্য বিশ্ব গণমাধ্যমে তাৎপর্যপূর্ণভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট — বর্ণবৈষম্য, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অভিজ্ঞতা — নিক্যাপকে একটি নৈতিক অবস্থান থেকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নিতে অনুপ্রাণিত করেছে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ
নিক্যাপের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে:
“ইসরায়েল একটি দমনমূলক রাষ্ট্রযন্ত্র হিসেবে ফিলিস্তিনিদের বসবাসযোগ্য পরিবেশ ধ্বংস করছে। স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ — কোনো কিছুকেই রেহাই দিচ্ছে না। শিশু হত্যা, গৃহবিনাশ, জল অবরোধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম আটকে দেওয়া — সবকিছুই আন্তর্জাতিক অপরাধ।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপ ‘জাতিসংঘের গঠনতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন’-এর সরাসরি লঙ্ঘন।
ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি কর্মসূচি ঘোষণা
নিক্যাপ শুধু কাগজে-কলমে নয়, মাঠপর্যায়েও তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে এক বিশাল সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এই সমাবেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার কর্মী, ফিলিস্তিনি সমর্থক এবং শান্তিকামী সংগঠনগুলোর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
সমাবেশের মূল বার্তা থাকবে:
“ফিলিস্তিন স্বাধীন হোক, আগ্রাসনের অবসান ঘটুক”
ইতিহাসে ফিরে দেখা: কেন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ফিলিস্তিনের বন্ধন এত গভীর?
দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক নাগরিক এবং সংগঠন ফিলিস্তিন ইস্যুকে তাদের নিজস্ব সংগ্রামের সঙ্গে তুলনা করেন।
১৯৯৪ সালের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেও একটি বর্ণবাদী সরকার দ্বারা শাসিত হতো, যাকে বলা হতো অ্যাপারথেইড।
নেলসন ম্যান্ডেলা নিজেও বারবার ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে বলেছিলেন:
“আমরা স্বাধীন হতে পারবো না যদি ফিলিস্তিনিরা স্বাধীন না হয়।”
এই ইতিহাস নিক্যাপের মতো সংগঠনকে আজকের দিনে ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরও সক্রিয় করে তুলেছে।
ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া: নিন্দা ও প্রত্যাখ্যান
নিক্যাপের এই বিবৃতির কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ইসরায়েল। তেলআবিব থেকে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন:
“এটি একপেশে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য। ফিলিস্তিনে আমাদের নিরাপত্তা রক্ষায় যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ বৈধ ও প্রয়োজনীয়।”
তবে আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের এই বক্তব্য খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না, কারণ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বেশিরভাগই নিক্যাপের বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া
নিক্যাপের বিবৃতির পরে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে জানানো হয়েছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে গৃহীত নতুন অভিযোগগুলো পর্যালোচনার জন্য একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (AI) ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। এবার নিক্যাপ তাদের বক্তব্যে আরও চাপ বাড়িয়ে দিলো।
গাজায় শিশু মৃত্যুর প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড়
নিক্যাপ তাদের বিবৃতিতে গাজার সাম্প্রতিক শিশুহত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। একাংশে বলা হয়:
“শিশুদের মৃত্যু কখনোই ‘কলেটারাল ড্যামেজ’ হতে পারে না। যারা একটি জাতির ভবিষ্যৎ, তাদের লক্ষ্যবস্তু বানানো চরম অমানবিক।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব বক্তব্য এখন আন্তর্জাতিক আদালতের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে।
ছবিতে প্রতিবাদ: সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল আন্দোলন
নিক্যাপের বিবৃতি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ট্রেন্ড করছে:
#StandWithPalestine
#NCAPForJustice
#StopIsraeliApartheid
বিশেষ করে আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার মানুষজন এই আন্দোলনে জোরদার অংশগ্রহণ দেখাচ্ছেন।
বিশ্লেষকের মতামত: এটি একটি 'টার্নিং পয়েন্ট'
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাদিবা এনজাবুলা বলেন:
“নিক্যাপের মতো একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের স্পষ্ট অবস্থান ভবিষ্যতের কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে। আফ্রিকার আরও অনেক দেশ এখন ফিলিস্তিনের পক্ষে তাদের অবস্থান জানাতে উৎসাহী হবে।”
উপসংহার: ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিশ্বমঞ্চে নতুন ঢেউ
নিক্যাপের শক্তিশালী বিবৃতি ও আন্দোলন এই বার্তাই দিয়েছে— ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এখন কেবল আরববিশ্বের দাবি নয়, এটি একটি বৈশ্বিক মানবাধিকার ইস্যু।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই চাপ যত বাড়বে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতিতে তত পরিবর্তন আসবে।
বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে—এই পথে ফিলিস্তিন কতদূর এগোতে পারে?
আরও পড়ুন: