Banner 728x90


পাকিস্তানের দুঃসময়ে আবারও পাশে চীন: বন্ধুত্বের নজির গড়ল বেইজিং

 

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: কে কী বলছে?

চীনের এই সহায়তার ঘোষণা ও দ্রুত বাস্তবায়নের প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বেশ কয়েকটি দেশ চীনের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানালেও, অনেকে এটিকে ‘কৌশলগত হস্তক্ষেপ’ বলেও সমালোচনা করেছে।

 সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত

মুসলিম বিশ্বের দুই প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও কিছু ত্রাণ সহযোগিতা পাঠালেও, চীনের দ্রুত প্রতিক্রিয়ার কাছে সেটা অনেকটাই ছোট মনে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রতি চীনের সহানুভূতি মুসলিম বিশ্বের জন্যও একটি বার্তা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 ভারতের প্রতিক্রিয়া: নীরবতা এবং সতর্ক পর্যবেক্ষণ

ভারত সরকার চীন-পাকিস্তান বন্ধুত্ব এবং চীনের সহায়তা নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও, নেপথ্যে চলছে সক্রিয় পর্যবেক্ষণ। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে, চীন এই সহায়তার আড়ালে পাকিস্তানে তাদের সামরিক ও গোয়েন্দা প্রভাব আরও বিস্তৃত করতে পারে।

ভারতের সাবেক কূটনীতিক রঞ্জন মাথুর এক সাক্ষাৎকারে বলেন:

"চীন তার 'সফট পাওয়ার' ব্যবহার করে কৌশলগতভাবে পাকিস্তানকে আরও কাছাকাছি টেনে নিচ্ছে। এটি শুধু মানবিক সহায়তা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের অংশ।"

যুক্তরাষ্ট্র: নীরবতা, না কি দুর্বলতা?

যুক্তরাষ্ট্র, যারা একসময় পাকিস্তানের প্রধান সামরিক মিত্র ছিল, এখন অনেকটাই নীরব। হোয়াইট হাউস থেকে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। বরং মার্কিন মিডিয়ায় চীনের ভূমিকাকে ‘চ্যালেঞ্জিং ফ্যাক্টর’ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।

পলিটিকো পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে:

"চীনের এই দ্রুত মানবিক সহযোগিতা, দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। পাকিস্তান এখন বেইজিং-এর হাত ধরেই সামলাতে চাইছে দুঃসময়।"


 সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া: "চীন আমাদের ভাইয়ের মতো"

পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে "#ThankYouChina" ট্রেন্ড করছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, যারা খাদ্য সংকটে ছিল, তাদের মধ্যে চীনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হচ্ছে। বন্যাকবলিত সিন্ধ প্রদেশের একজন শিক্ষক বলেন:

"যখন ঘরের চাল উড়ে গেছে, খাদ্য নেই, পানীয় জল নেই—তখন একমাত্র চীন-ই ছিল, যারা আমাদের কথা ভেবেছে। এটা আমরা কোনোদিন ভুলব না।"

 আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন


 ভবিষ্যৎ সম্পর্ক: শুধু বন্ধু নয়, নির্ভরযোগ্য সঙ্গী?

চীন ও পাকিস্তানের এই সম্পর্ক ক্রমেই একটি ‘অবিচ্ছেদ্য অংশীদারত্ব’-এ পরিণত হচ্ছে। সামরিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক—সব দিক থেকেই চীন পাকিস্তানের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। তবে পাকিস্তানের অর্থনীতির ওপর এই নির্ভরতা কি ভবিষ্যতে স্বাধীনতাকে হুমকিতে ফেলবে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন যেভাবে অবকাঠামো ও ঋণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে, পাকিস্তানও সেই ফাঁদে ধীরে ধীরে আটকে যাচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীনের বিকল্প সঙ্গীও নেই।


 সামরিক সহযোগিতা বাড়বে?

চীনের এই মানবিক সহায়তার পরবর্তী ধাপে সামরিক সহযোগিতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে চীনের কাছ থেকে বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম ও ড্রোন সংগ্রহ করেছে। এবার স্বাস্থ্যসেবা ও পরিকাঠামোর পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে পারে বেইজিং।

চীনের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে:

"মানবিক সহায়তা ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের ভিত্তি তৈরি করে। পাকিস্তানের দুর্বল মুহূর্তগুলোতে চীনের সহায়তা তাদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলছে।"


ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: ভারতের জন্য বার্তা?

চীনের এই পদক্ষেপকে কেবল পাকিস্তানের সাহায্য হিসেবে দেখলে ভুল হবে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একচেটিয়া প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করার একটি স্পষ্ট বার্তা। বিশেষ করে সিপিইসি প্রকল্পের রুট কাশ্মীর অঞ্চলের ভেতর দিয়ে যাওয়ায় ভারত এর আগেও আপত্তি তুলেছে।

এখন চীনের সরাসরি মানবিক সহায়তা ভারতের পাশে নয়, বরং প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রে পৌঁছানো—এটি দিল্লির জন্য স্পষ্ট এক সতর্কবার্তা।


উপসংহার: বন্ধু কাকে বলে?

চীনের এই ভূমিকা আরেকবার মনে করিয়ে দিল—বন্ধুত্ব কূটনৈতিক চুক্তির কাগজে লেখা থাকে না, সেটা বোঝা যায় দুঃসময়ে।

যখন আন্তর্জাতিক মিত্ররা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন এক বন্ধুর পাঠানো খাবারের প্যাকেট, মেডিকেল কিট আর একটি জরুরি তহবিল হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার আশা। পাকিস্তানের চোখে এখন চীন সেই আশার প্রতীক।

পাকিস্তানের ভবিষ্যত হয়তো নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাবে, কিন্তু একথা অনস্বীকার্য—চীন তাদের পাশে রয়েছে, এবং থাকবে। আর এই বন্ধুত্ব সময় ও ইতিহাসের কঠিন পরীক্ষায় বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছে:
“আল্লাওয়েদার ফ্রেন্ড”— শুধু কথার কথা নয়, বাস্তবের বাস্তবতা।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url