টেক্সাসে বিধ্বংসী বন্যায় ৪৩ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ২৭ কিশোরী: মৃতদের মধ্যে পাঁচ জন ক্যাম্পার সনাক্ত Five deceased campers identified as death toll continues to rise after devastating Texas flood
টেক্সাসে বিধ্বংসী বন্যায় ৪৩ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ২৭ কিশোরী: মৃতদের মধ্যে পাঁচ জন ক্যাম্পার সনাক্ত
কী ঘটেছে টেক্সাসে?
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের কার কাউন্টিতে ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২৭ জন কিশোরী এখনও নিখোঁজ রয়েছে। শনিবার পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ১৫ জন শিশু ও ২৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক বলে স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চিত করেছে।
ক্যাম্প মিস্টিকে মৃতদের মধ্যে পাঁচজন কিশোরী
‘ক্যাম্প মিস্টিক’ নামক একটি প্রাইভেট খ্রিস্টান গার্লস রিট্রিট ক্যাম্পে অবস্থানরত পাঁচজন কিশোরী মারা গেছে বলে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে একজনের নাম জেনি, যার মা অ্যানে হান্ট
ফক্স নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
একটি এনজিও ‘আ ভয়েস ফর
দ্য ভয়সলেস’ জানিয়েছে, রেনে স্মাজস্ট্রলা নামের আরেক কিশোরীও নিহতদের একজন।
সনাক্ত হওয়া আরও দুই বন্ধুর মৃত্যু
ফক্স ৪ ডালাসের বরাতে জানা গেছে, নিহত দুই ক্যাবিনমেট ছিল লিলা বোনার এবং এলইজ পেক—দুজনেই ব্র্যাডফিল্ড এলিমেন্টারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি শেষ করেছিল সম্প্রতি। পঞ্চম ক্যাম্পারের পরিবার অনুরোধ করেছে যেন তার নাম প্রকাশ না করা হয়।
নিখোঁজরা কারা?
শনিবার পর্যন্ত ২৭ জন কিশোরী নিখোঁজ রয়েছে। ক্যাম্পে মোট ৭৫০ জন উপস্থিত ছিলেন বন্যার সময়। অনেক পরিবার এখনো ইনগ্রাম এলিমেন্টারি স্কুল এবং কেরভিলের আর্কেডিয়া লাইভ থিয়েটারে স্থাপিত রিইউনিফিকেশন সেন্টারে সন্তানদের খোঁজে অপেক্ষা করছেন।
ভয়াবহ বাস্তবতা—"কেউ কল্পনাও করতে পারেনি"
কার কাউন্টির বিচারক রব কেলি বলেছেন,
“এটি সত্যিই হৃদয়বিদারক। আমরা অনেক মরদেহের ব্যাগ দেখেছি—এই দৃশ্য আমাদের
ভেঙে দিয়েছে।”
এছাড়া, ‘হার্ট ও’ দ্য হিলস’
ক্যাম্পের পরিচালক ও সহ-মালিক
জেইন র্যাগসডেলও বন্যায়
নিহত হয়েছেন।
প্রাণরক্ষায় হেলিকপ্টার অভিযানে শতাধিক উদ্ধার
১৩ বছর বয়সী এলিনর লেস্টার এপি-কে বলেন, তিনি ও তাঁর সহপাঠীরা হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার হন। তিনি জানান, “পুরো ক্যাম্প ধ্বংস হয়ে গেছে।” সিনিয়র হিলের উপরের জায়গায় থাকায় তারা বেঁচে যান। তবে ছোট বাচ্চারা নদীর ধারে থাকার কারণে দ্রুত প্লাবিত হয়ে পড়ে।
ন্যাশনাল গার্ড, কোস্ট গার্ড এবং জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত ৮৫০ জনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১৬৭ জনকে হেলিকপ্টারে করে আনা হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৮ জন।
আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন
গুয়াডালুপে নদীর পানি ৪৫ মিনিটে ৩০ ফুট বাড়ে
শুক্রবার সকালে ভারী বৃষ্টির কারণে গুয়াডালুপে নদীর পানি হঠাৎ করে ৩০ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায়। এর ফলে নদীর ধারে থাকা এলাকাগুলো মুহূর্তের মধ্যে প্লাবিত হয় এবং অনেক ক্যাম্পার পালাতে না পেরে আটকে পড়েন।
রাষ্ট্রপতি, গভর্নর ও ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়া
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশাল-এ লেখেন, "মেলানিয়া
ও আমি টেক্সাসের সব পরিবারের জন্য
প্রার্থনা করছি। আমাদের সাহসী ফার্স্ট রেসপন্ডাররা যা পারে তাই
করছে। গড ব্লেস টেক্সাস!"
"গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট টেক্সাসের ১৫টি কাউন্টিকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং তিনি ইতোমধ্যেই ফেডারেল দুর্যোগ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। এ সময় তিনি
বলেন, 'এটি এমন এক সংকটময় মুহূর্ত,
যখন আমাদের সবারই ঈশ্বরের করুণা ও সহায়তা প্রয়োজন।'"
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এক্স-এ লেখেন, “আমাদের জাতির হৃদয় ভেঙে গেছে। এটি একটি অকল্পনীয় দুর্যোগ।”
যোগাযোগ ও সহায়তা
কের কাউন্টি শেরিফ অফিস জানায়, নিখোঁজদের তথ্য জানতে রেড ক্রসের ১-৮০০-৭৩৩-২৭৬৭ নম্বরে ফোন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ক্যাম্প মিস্টিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা এখনও কোনো ফোনকল পাননি, তাদের সন্তান নিরাপদ রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎবিহীন হাজারো মানুষ
কেরভিল পাবলিক ইউটিলিটি বোর্ড জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬০০-রও বেশি মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
ভবিষ্যতের পদক্ষেপ
টেক্সাস রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ১,৩০০ জনের বেশি স্টেট রেসপন্ডার, ৮০০-র বেশি যানবাহন এবং সরঞ্জাম মাঠে নামানো হয়েছে। অতিরিক্ত এয়ারক্রাফট পাঠানোর জন্য কোস্ট গার্ডে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অধিকৃত এলাকায় নদীর দুই পাশে প্রায় ৩০০ ফুট এলাকা পরিষ্কার করে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যতক্ষণ না শেষ নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ তল্লাশি থামবে না।
উপসংহার
এই হৃদয়বিদারক বন্যা কেবল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগই নয়, বরং অনেক পরিবারের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। শিশুদের হাসি, ক্যাম্পের আনন্দময় মুহূর্ত, সবকিছুই মুহূর্তেই থেমে গেছে পানির তোড়ে। এখন আমাদের কর্তব্য—সহানুভূতি, সহায়তা এবং অবিরত তল্লাশি।
FAQs (প্রশ্ন ও উত্তর)
১.
কীভাবে
এত
দ্রুত
পানি
বেড়ে
গেল?
শুক্রবার সকালের ভারী বৃষ্টিতে গুয়াডালুপে নদীর পানি মাত্র ৪৫ মিনিটে ৩০
ফুট বেড়ে যায়।
২.
ক্যাম্প
মিস্টিকে
মোট
কতজন
উপস্থিত
ছিল?
সেসময় ক্যাম্পে মোট ৭৫০ জন উপস্থিত ছিলেন।
৩.
কারা
নিখোঁজ
রয়েছে?
২৭ জন কিশোরী এখনো
নিখোঁজ, যাদের অধিকাংশই ক্যাম্প মিস্টিকে ছিল।
৪.
উদ্ধার
কার্যক্রমে
কারা
অংশ
নিচ্ছে?
ন্যাশনাল গার্ড, ইউএস কোস্ট গার্ড, স্থানীয় শেরিফ অফিস, ও অন্যান্য জরুরি
বিভাগ।
৫.
কোথায়
পরিবাররা
তথ্য
পেতে
পারেন?
রেড ক্রসের হেল্পলাইন ১-৮০০-৭৩৩-২৭৬৭ নম্বরে কল করতে বলা
হয়েছে।
Please don’t forget to leave a review.
Explore more by joining me on Patreon