ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ২ হাজার ব্যক্তিকে ‘পুশ ইন’ ভূমিকা
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে গত এক মাসে ২ হাজারেরও বেশি ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এই ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হলেও ভারত তাদের এই কর্মকাণ্ডকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো’ বলে দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যা ইতিমধ্যে আঞ্চলিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে
পুশ ইন কীভাবে শুরু হয়?
ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত হন। এই হামলার জেরে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি অভিযান শুরু করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এরপর থেকেই ভারত অভ্যন্তরীণভাবে ‘অবৈধ অভিবাসী’ চিহ্নিত করার অভিযান শুরু করে। গুজরাট, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও অন্যান্য রাজ্য থেকে ব্যক্তিদের আটক করে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে এসে ‘পুশ ইন’ করা হচ্ছে
পুশ ইন-এর পরিসংখ্যান
গত ৭ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রায় ২ হাজার ব্যক্তিকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যককে পাঠানো হয়েছে মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও অন্যান্য সীমান্ত এলাকা দিয়ে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়ায় আরও ২ হাজার ব্যক্তি সীমান্তে অপেক্ষা করছেন
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ সরকার এই পুশ ইন প্রক্রিয়াকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ভারতকে চার দফায় চিঠি দিয়ে এই কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির নাগরিকত্ব যাচাই না করে এভাবে সীমান্তে ঠেলে দেওয়া আইনবহির্ভূত। যদি সত্যিই কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে থাকে, তবে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় তাদের ফেরত নেওয়া হবে
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
পুশ ইন করা ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, তাদের উপর অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। তাদের দাবি, বিএসএফ সদস্যরা তাদের চোখ বেঁধে, মারধর করে এবং পর্যাপ্ত খাবার ও পানি না দিয়ে সীমান্তে পাঠিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে
রাজনৈতিক প্রভাব
এই ঘটনায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পুশ ইন প্রক্রিয়া বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, এই ঘটনা বাংলাদেশকে চীন ও পাকিস্তানের দিকে কৌশলগতভাবে ঘেঁষার সুযোগ দিচ্ছে
।
উপসংহার
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ একটি জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। পুশ ইন ইস্যুটি কূটনৈতিক ও মানবাধিকারের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে