Banner 728x90


সেলফি তুলতে গিয়ে ৯ পর্যটকের মর্মান্তিক মৃ/ত্যু মুহূর্তের ভুলে নিভে গেল প্রাণ!

 

সেলফি তুলতে গিয়ে ৯ পর্যটকের মর্মান্তিক মৃ/ত্যু মুহূর্তের ভুলে নিভে গেল প্রাণ!

 ঘটনাস্থলেই নিথর ৯টি দেহ!

 এ যেন একটি আনন্দ ভ্রমণ রূপ নেয় চরম বিয়োগান্তক পরিণতিতে।

 আনন্দের মুহূর্ত বদলে গেল মৃত্যুর মঞ্চে

ঘটনাটি ঘটেছে নাগপুর জেলার সেলু এলাকার পাশে প্রবাহিত ওয়েনগঙ্গা নদীতে। একটি কলেজের বন্ধু দল পিকনিকে গিয়েছিল রবিবার সকালে। নদীর তীরে গিয়ে সবাই মিলে সেলফি তুলছিল। সেই মুহূর্তে, হঠাৎ নদীর স্রোত বেড়ে গেলে পা পিছলে একে একে অনেকে পানিতে পড়ে যান।

যারা পেছনে ছিলেন, তারাও বন্ধুবান্ধবদের বাঁচাতে গিয়ে ডুবে যান। এ সময় আশপাশে কেউ ছিলেন না, যে সময়মতো সাহায্য করতে পারতেন।

 ভিডিও ভাইরাল, নেটিজেনদের শোক

স্থানীয় এক যুবক দূর থেকে মোবাইলে ভিডিও করছিলেন তাদের সেলফি তোলা — সেই ভিডিওতেই ধরা পড়ে মৃত্যুর দৃশ্য! ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, একে একে পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে সবাই, কিন্তু কেউ কাউকে বাঁচাতে পারছে না।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকে এই দুর্ঘটনাকে 'মানবিক ট্র্যাজেডি' বলে উল্লেখ করেছেন।

 কারা ছিলেন সেই ৯ জন?

নিহতদের মধ্যে ৫ জন ছাত্রী ও ৪ জন ছাত্র। সকলেই একটি প্রাইভেট কলেজের শিক্ষার্থী এবং অনেকেই চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শেষ করে আনন্দ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন।
তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে:

  1. অরুণা দেশমুখ (২১)

  2. রিনা কুলকার্নি (২২)

  3. জয়ন্ত গায়কোয়াড় (২৩)

  4. মানসী মিশ্রা (২০)

  5. সঞ্জয় রাও (২২)

  6. নিখিল প্যাটেল (২১)

  7. সীমা যাদব (২০)

  8. পায়েল ঠাকুর (২২)

  9. অনুভব কুশওয়াহা (২৩)

পরিবারের লোকজন ও সহপাঠীরা শোকে বাকরুদ্ধ। কলেজে ১ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

 উদ্ধার তৎপরতা এবং পুলিশি বিবৃতি

ঘটনার পরপরই স্থানীয় পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য দুজন কোনোভাবে তীরে উঠতে সক্ষম হন এবং তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ জানিয়েছে, “তীব্র স্রোতের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এলাকাটি পর্যটকদের জন্য নিরুৎসাহিত করা হলেও কেউ হয়তো সতর্কতাকে অবহেলা করেছেন।”

 কেন এমন দুর্ঘটনা?

ভারতে প্রতি বছর প্রায় শতাধিক মানুষ ‘সেলফি দুর্ঘটনা’য় প্রাণ হারায়। নদী, পাহাড়, ট্রেন লাইন, হাইরাইজ বিল্ডিং—সব জায়গায়ই অসতর্কভাবে সেলফি তোলার প্রবণতা রয়েছে তরুণদের মধ্যে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “সেলফি নেওয়ার সময় মানুষ আশপাশের হুমকিকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র ক্যামেরার ফ্রেমের দিকে মনোযোগ দেয়, যেটি জীবনের চরম ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”

 ভয়াবহ পরিসংখ্যান:

  • ২০১১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিশ্বে সেলফি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা: ৩৭৮ জন

  • যার মধ্যে শুধু ভারতেই: ২১৮ জন

  • সর্বাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে পানির ধারে, বিশেষ করে নদী ও জলপ্রপাত এলাকায়।

 প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা:

স্থানীয় দোকানদার গোবিন্দ রাও বলেন,

“আমি দূর থেকে ওদের হাসি-মজা করতে দেখছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনি। এরপর বুঝে উঠতে পারিনি কী ঘটছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সব শেষ!”

 মনোবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি

তরুণদের মধ্যে ‘পারফেক্ট সেলফি’ তোলার প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে। এটা এক ধরনের মানসিক আসক্তিতে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অনুপম চক্রবর্তী বলেন—

আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন

“সামাজিক মাধ্যমে 'লাইক' বা 'রিয়্যাকশন'-এর জন্য মানুষ নিজের জীবন পর্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে, এটা খুবই দুঃখজনক।”

প্রশাসনের দায় কোথায়?

ঘটনাস্থলে কোনো ধরনের সতর্কবার্তা বা নিষেধাজ্ঞা বোর্ড ছিল না। এছাড়াও পর্যটন এলাকা হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে।
এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

 সচেতনতার জন্য আহ্বান

এই দুর্ঘটনার পর অনেক সামাজিক সংগঠন ও সচেতন মহল আহ্বান জানাচ্ছে:

  • ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সেলফি তোলা থেকে বিরত থাকতে

  • প্রশাসনকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সেলফি-নিষেধ signage দিতে

  • তরুণদের ডিজিটাল আসক্তি কমাতে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম পরিচালনার আহ্বান


 উপসংহার:

সেলফি — একটা মুহূর্তের স্মৃতি হয়ে থাকার কথা, কিন্তু সেটাই যদি হয়ে ওঠে জীবনের শেষ মুহূর্ত, তখন তা শুধু একটি ব্যক্তিগত ক্ষতি নয় — বরং একটি সামাজিক ট্র্যাজেডি।
ওয়েনগঙ্গা নদীর তীরে ঘটে যাওয়া এই ৯ তরুণের মৃত্যু যেন পুরো জাতিকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে:
"স্মৃতি ধরে রাখতে গিয়ে জীবন হারানোর কোনো মানে হয় না!"


এই প্রতিবেদনের নিচে আপনি চাইলে সংযুক্ত করতে পারেন:

  • ভিডিও রিপোর্টের লিংক

  • নিহতদের পরিবারের সাক্ষাৎকার

  • সচেতনতামূলক ইনফোগ্রাফিক

  • “সেলফি ডেঞ্জার জোন” ম্যাপ


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url