Banner 728x90


ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে কাঁপছে ইসরায়েলের আকাশ

 


মধ্যপ্রাচ্যে ফের উত্তেজনা চরমে, যুদ্ধাবস্থার ইঙ্গিত!

তারিখ: ১৫ জুন ২০২৫
প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক ডেস্ক


ভূমিকা:

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার দীর্ঘদিনের শত্রুতা ফের নতুন মাত্রা লাভ করেছে। সম্প্রতি ইরান একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে দিচ্ছে ইসরায়েলের আকাশসীমার দিকে। বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, এই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত এবং এর লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি, রাডার সিস্টেম এবং নিরাপত্তা স্থাপনাগুলো। ইসরায়েল এই হামলার বিরুদ্ধে কড়া জবাব দিতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে।

সাম্প্রতিক এই হামলা কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং পুরো বিশ্বে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। একদিকে যখন বিশ্ব কূটনীতি যুদ্ধ এড়াতে ব্যস্ত, তখন ইরান-ইসরায়েল সংঘাত আবারো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রূপ নিতে চলেছে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।


প্রথম ধাক্কা: মধ্যরাতে আকাশে হঠাৎ বিস্ফোরণ

১৩ জুন ২০২৫, মধ্যরাত। হঠাৎ করেই ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিব ও আশপাশের শহরগুলোর আকাশে বিকট শব্দ। মুহূর্তেই সক্রিয় হয়ে যায় আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তবে এবার পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছিল হাইপারসনিক প্রযুক্তির, যা আয়রন ডোমকে ফাঁকি দিতে সক্ষম।

প্রথম ধাক্কায়ই আকাশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। হাজারো মানুষ শেল্টারে আশ্রয় নেয়, জরুরি সাইরেন বাজতে থাকে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই রাতে কমপক্ষে ২৫টি ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল আঘাত হানে তাদের ভূখণ্ডে।


হামলার লক্ষ্যবস্তু কী ছিল?

প্রথমিক বিশ্লেষণে জানা গেছে, হামলার মূল লক্ষ্য ছিল নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো:

  1. নেভাতিম এয়ারবেস – যেখানে ইসরায়েলের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন রয়েছে।

  2. ডিমোনা পারমাণবিক স্থাপনা – যদিও সেখানে সরাসরি হামলার প্রমাণ মেলেনি, তবে নিকটবর্তী অঞ্চলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত।

  3. হাইফা সমুদ্রবন্দর – বাণিজ্যিক ও সামরিক উভয় গুরুত্ব রয়েছে এই বন্দরের।

  4. আশকেলন বিদ্যুৎকেন্দ্র – ইসরায়েলের বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ভূমিকা পালন করে।

  5. রামাত দাভিদ এয়ারবেস – উত্তর ইসরায়েলের অন্যতম কৌশলগত বিমান ঘাঁটি।

এছাড়া তেলআবিবের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখা সম্ভব হয়েছে।


ইরানের অবস্থান: “এটি ছিল আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া”

ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল ইসরায়েলের আগের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া। তারা দাবি করেছে, ইসরায়েল গত সপ্তাহে দামেস্ক ও বাগদাদে ইরানপন্থী মিলিশিয়াদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছিল। সেই প্রতিক্রিয়ায় “অপারেশন স্ট্রাইক অব জাস্টিস” নামে এই মিসাইল আক্রমণ চালানো হয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি নিজেও এক ভাষণে বলেন:

"যখন আমাদের জনগণ রক্তাক্ত হয়, তখন আমরা প্রতিরোধ জানাব। আমাদের লক্ষ্য আগ্রাসন নয়, আত্মরক্ষা।"



 ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া: “এই হামলার চড়া মূল্য দিতে হবে”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দৃঢ় ভাষায় জানিয়েছেন:

“আমাদের ভূখণ্ডে একের পর এক হামলা চলতে পারে না। ইরানকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। ইসরায়েল প্রতিরক্ষায় নয়, এবার আক্রমণে যাবে।”

এরপর থেকেই ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সিরিয়ার ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে, যেখানে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ ও আইআরজিসি সদস্যদের ঘাঁটি রয়েছে। ইতিমধ্যেই সেখানে ৩২ জন নিহত হওয়ার খবর এসেছে।


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: শান্তির আহ্বান

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির দ্রুত অবসান চেয়েছে:

  • জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস: “এই সংঘাত বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের হামলা সাধারণ মানুষের প্রাণনাশ ডেকে আনবে।”

  • যুক্তরাষ্ট্র: ইসরায়েলকে সমর্থনের পাশাপাশি উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

  • চীন ও রাশিয়া: ইরানের পাশে অবস্থান নিলেও সংঘাত না বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে।

  • সৌদি আরব ও ইউএই: মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা রক্ষায় জোর দিয়েছে।


সাধারণ জনগণের অবস্থা: আতঙ্কে দিন কাটছে

ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ বর্তমানে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। স্কুল, অফিস, বাজার—সবকিছু প্রায় বন্ধ।
আহাভা লেভি নামে এক তেলআবিববাসী নারী বলেন:

“রাতভর আমরা শেল্টারে কাটিয়েছি। বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে। যুদ্ধ চাই না আমরা।”

অন্যদিকে ইরানের জনগণের মাঝেও ভয় কাজ করছে যে, ইসরায়েল হয়তো এবার বড়সড় পাল্টা হামলায় রাজধানী তেহরান কিংবা অন্য বড় শহরগুলোকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে।


বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত?

আন্তর্জাতিক সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তা শুধু ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এতে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, রাশিয়া, চীন এমনকি ন্যাটো জড়িয়ে যেতে পারে। ফলাফল হতে পারে বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহে অস্থিরতা, শেয়ারবাজারে পতন, খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি এবং শরণার্থী সংকট।


ইরানের প্রযুক্তি উন্নয়ন: কীভাবে আয়রন ডোমকে ফাঁকি দিল মিসাইল?

ইরান এবার যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যবহার করেছে, সেগুলো হাইপারসনিক স্পিডে গমন করে। এতে ছিল হঠাৎ দিক পরিবর্তনের ক্ষমতা, যার ফলে ইসরায়েলের আয়রন ডোম সিস্টেম অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মিসাইলগুলো সম্ভবত "ফাতেহ-১১০" এবং "কাইবার শিকন" শ্রেণির। এগুলো তেহরান সামরিক গবেষণাগারে তৈরি।


সামনের দিনগুলোতে কী ঘটতে পারে?

  • ইসরায়েল বড়সড় পাল্টা হামলায় যেতে পারে

  • হিজবুল্লাহ ও হামাস ইরানের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ বাড়াতে পারে

  • যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে ইরানের ভেতরে অভিযান চালাতে পারে

  • পারমাণবিক হুমকি বাড়তে পারে

  • ইরান যদি পরমাণু অস্ত্র সক্রিয় করে, পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে বাধ্য


উপসংহার: শান্তি না যুদ্ধ?

মধ্যপ্রাচ্য বহুদিন ধরেই সংঘাতে জর্জরিত এক অঞ্চল। তবে বর্তমান পরিস্থিতি যেন এক নতুন ভয়াবহতা বয়ে আনছে। ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে কাঁপছে ইসরায়েলের আকাশ—এই বাক্যটি কেবল একটি শিরোনাম নয়, এটি একটি যুদ্ধের পূর্বাভাস।

বিশ্ব আজ এমন এক বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে এক ভুল সিদ্ধান্তই লাখো প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ, আন্তর্জাতিক সংলাপ এবং মানুষের প্রাণরক্ষার অঙ্গীকার।


প্রতিবেদন: আন্তর্জাতিক সংবাদদল | সম্পাদনা: কামরুল আহমেদ | সোর্স: আল জাজিরা, বিবিসি, টাইমস অফ ইসরায়েল, প্রেস টিভি, রয়টার্স

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url